চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অনুপ্রবেশ ও মানব পাচার অব্যাহত রয়েছে। এতে করে প্রান্তিক অঞ্চলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। স্থানীয়রা প্রায়ই অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর ফাঁকি দিয়ে এসব চলছে।
গত বুধবার চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় একই পরিবারের তিন সদস্যকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটক ব্যক্তিদের চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তরের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারা হলো কিশোরগঞ্জ জেলার লাল চান দাসের স্ত্রী কনকলতা রানী, তার ছেলে শৈলেন দাস ও নাতি অয়ন দাস। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার সকালে হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির বাল্লা বিওপির অধীন কলাবাগান এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমদাদুল বারী খান। তিনি জানান, আটক ব্যক্তিরা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশকালে চুনারুঘাট বিজিবি টহল দল বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদের আটক করে।
আটক ব্যক্তিরা জানায়, উপজেলার টেকেরঘাট গ্রামের মানব পাচারকারী চক্রের দালাল জামাল মিয়া তাদের ভারতে প্রবেশে সহযোগিতা করে। পরে বিজিবি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার অপরাধে মানব পাচারকারী জামাল মিয়াসহ চারজনের নামে মামলা করে।
৫ আগস্টের পর চুনারুঘাট সীমান্তপথ দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্র। থামছে না অনুপ্রবেশ। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু মানুষ দালাল চক্রের সহায়তায় সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। এ সময় চুনারুঘাট ও মাধবপুর সীমান্তে অর্ধশতাধিক লোক অনুপ্রবেশ করলেও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে মাত্র ১৪ জন। স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের আনাগোনাও বেড়েছে।
এ বিষয়ে বিজিবি জানায়, অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্তে জনবল দ্বিগুণ করা হয়েছে। নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া মানব পাচারকারীর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
চুনারুঘাট ও মাধবপুরে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার এই সীমান্ত এলাকাটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশিদের জন্য শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসা ছাড়া সব ধরনের ভিসা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছে ভারত। এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকেই সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে বেড়েছে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের প্রবণতা।
এদিকে ভারতে অনুপ্রবেশে মানুষের আগ্রহ পুঁজি করে সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চক্রগুলো সীমান্ত পাড়ি দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের চুক্তির ভিত্তিতে সীমান্ত পার করে দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চক্রের এক সদস্য জানায়, সীমান্ত পার করা হয় বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে। ভারতে যাওয়ার কারণ এবং আর্থিক সামর্থ্যের ওপর এটি নির্ভর করে। যেমন– কেউ যদি কাজের জন্য যায় তাহলে এক রেট, ঘুরতে গেলে আরেক রেট। আবার পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে যেতে চাইলে অন্যরকম রেট। সেটি জনপ্রতি তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মই দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায় নারী-পুরুষ ঝুঁকি নিয়ে কাঁটাতার পার হচ্ছে। এ ভিডিও প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয় সীমান্ত এলাকায়।
হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমদাদুল বারী খান জানান, ৫ আগস্ট থেকে উপজেলার সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে; যা এখনও অব্যাহত। এখন পর্যন্ত তাদের হাতে আটক হয়েছে মোট ১৪ জন অনুপ্রবেশকারী।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্টের পর বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ ও এ কাজে সহায়তা করার অপরাধে বিজিবি কর্তৃক চুনারুঘাট থানায় ১৫ জনের নামে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫ জন। বাকি ১০ জন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন অনুপ্রবেশের মামলার তথ্য জানিয়ে বলেন, বিজিবি ছাড়াও থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply