বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ১২:০৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নবীগঞ্জে লটারির মাধ্যমে ১৩ ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগ লাখাইয়ে পুলিশ দেখে ভয়ে পালাতে গিয়ে যুবলীগ নেতার মৃত্যু হবিগঞ্জে ২২ বছর পর হত্যা চেষ্টা মামলার রায়ে ৮ জনই খালাস ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশকালে হবিগঞ্জের ৩ যুবক আটক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে গাঁজাসহ কারবারি গ্রেফতার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে দুদকের হবিগঞ্জ উপ-পরিচালকসহ ৩ সদস্যের অভিযান লাখাইয়ে পার্টানার কংগ্রেস কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জে ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশ নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা মাধবপুরে দুনীর্তি প্রতিরোধ কমিটির বির্তক প্রতিযোগিতা বানিয়াচংয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ॥ দেখার যেন কেউ নেই
চুনারুঘাটের জহুর আলীর মৃত্যু পুরোটাই রহস্যে ঘেরা ॥ এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি

চুনারুঘাটের জহুর আলীর মৃত্যু পুরোটাই রহস্যে ঘেরা ॥ এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৮ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ভারত থেকে লাশ ফেরত এসেছে, দাফন কাফন হয়েছে। দুই দেশের দায়িত্ব মিইয়ে গেছে হাওয়ায়। কিন্তু স্বজনদের চোখের পানিতে ভিজছে বালিশ। শোকে পাথর স্ত্রী-সন্তানরা। এলাকাবাসী কোন হিসেবই মেলাতে পারছেন না। মরদেহের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা-ছেঁড়া ও লীলাফুলা জখম। জহুর আলীর মৃত্যু নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। স্বজন ও পাড়া-পড়শিদের মাঝে নানামুখি গুঞ্জন। জহুর আলীর মৃত্যুর পুরোটাই রহস্য ভরা। কেউই হিসেব মেলাতে পারছেন না। কেন ঘটলো, কি কারণে এ ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা তাও অস্পষ্ট। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারও হয়নি। নালুয়া চা বাগানের পূর্ব টিলায় হত্যাকান্ডের শিকার ৬০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধের হত্যাকান্ড ও টাকা লুটে নেয়ার ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। পুলিশের তেমন উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি। এতে চরম আতংক বিরাজ করছে গ্রামবাসীর মাঝে। এমনকি নিহতের মরদেহ ভারতের খোয়াই জেলার গৌড়নগরে কিভাবে গেল, তাও উদঘাটন করতে পারেনি চুনারুঘাট পুলিশ। ৫ জানুয়ারী রাতে এই হত্যাকান্ড ঘটলেও এক সপ্তাহেও চুনারুঘাট পুলিশ এর রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন। এলাকার একাধিক মানুষ বলেছেন, জহুর আলীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ ভারতে ফেলে রাখা হয়েছে। যাতে এই খুনের রহস্য উদঘাটন না হয়। মাদক ও চোরা চালান সাম্রাজ্য যেন বাঁধাগ্রস্থ না হয়।
যেভাবে পাওয়া যায় জহুর আলীর মৃতদেহের সন্ধান ঃ
৬ জানুয়ারী সকালে গুইবিল সীমান্তের ১৯৬৮নং মেইন পিলারের ৫ ও ৬নং সাব পিলারের কাছে ত্রিপুরার গৌড়নগর এলাকা থেকে বিএসএফ এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে খোয়াই থানা পুলিশের কাছে অজ্ঞাত হিসেবে হস্তান্তর করে। গৌড়নগরের বিপরীতে রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সীমান্ত গ্রাম বড়ক্ষের। এখানে বড়ক্ষের মাজার রয়েছে। মাজারের ডান পাশে অনতিদূরে রয়েছে একটি ছড়া। ছড়াটি ভারত থেকে প্রবাহিত। ছড়ার উপরে একটি কালভার্ট রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া নির্মিত হয়েছে কালভার্টের উপর দিয়ে। সে কারণে কালভার্টের নীচ দিয়ে চোরা ব্যবসায়ীরা অবৈধ পণ্য আনা নেয়া করে থাকে। এই সীমান্ত ঘাটে নেতৃত্ব দেয় রূপন নামের ৩৮ বছর বয়সী এক যুবক। সেই কালভার্টের অনতিদূরে জহুর আলীর মরদেহ দেখতে পায় বিএসএফ। পরে পরিচয় না পাওয়ায় খোয়াই থানা পুলিশ সেই মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। অজ্ঞাত পরিচয়ে পাওয়া মৃত ব্যক্তির একটি ছবি ফেইসবুকের প্রকাশিত হলে শুরু হয় তোলপাড়। ফেইসবুকে প্রকাশিত ছবিটি বাংলাদেশী বৃদ্ধ জহুর আলীর বলে সনাক্ত করেন তার স্বজনরা। এরপর চুনারুঘাট থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন ফেইসবুকের সূত্র ধরে গাজীপুর ইউনিয়নের ডুলনা গ্রামে গিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেন। মৃত জহুর আলীর একমাত্র পুত্র অলি মিয়া জানান, তার বাবা ঢাকা বসুন্ধরা সিটির সিটিএল কোম্পানীতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ৪ জানুয়ারী বাড়িতে আসেন। পরদিন রবিবার বিকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হন এবং সেই থেকে তিনি নিখোঁজ হন। জহুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বলেন, তার স্বামী যখন ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন তখন তার কাছে ১০/১২টা নতুন লুঙ্গি ছিলো। তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে লুঙ্গির ব্যবসা করবেন বলে জানান। ঢাকা থেকে আসার পর স্বামীর কাছে ১০/১১ হাজার টাকা একটি পলিথিনে মুড়ানো ছিলো বলে জানান তিনি। সেই নতুন লুঙ্গি এবং টাকা সাথে নিয়ে তিনি রবিবার সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফিরেননি। স্ত্রী সুফিয়া বলেন, রবিবার রাত প্রায় ১২টার সময় এলাকার শফিক মিয়া নামের এক ব্যক্তি তাকে বলেছে তার স্বামী অজ্ঞান হয়ে বাড়ির কাছেই একটি ধানী জমিতে পড়ে রয়েছেন। এ খবরটা তিনি পাশের বাড়ির বিলাল মিয়ার কাছ থেকেও শুনেছেন। সেই খবর পেয়ে তিনিসহ তার আত্মীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে জহুর আলীকে পাননি। তবে তার পায়ের প্লাস্টিকের নীল রঙের স্যান্ডেল, মাফলার ও মোবাইল ফোনটি পড়ে থাকতে দেখেন এবং যে পলিথিনে টাকা মুড়ানো ছিলো সেটাও ছেড়া অবস্থায় দেখতে পান তারা। ঘটনাস্থলের অনতিদূরে সাদা রঙের আরও এক জোড়া প্লাস্টিকের স্যান্ডেল দেখা যায়। চুনারুঘাট থানার দারোগা দেলোয়ার হোসেন ডুলনা গ্রামে জহুর আলীর বাড়িতে আসেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তিনি দুই জোড়া স্যান্ডেল, মোবাইল ফোন ও টাকা মুড়ানো সেই পলিথিন আলামত হিসেবে জব্দ করে থানায় নিয়ে যান।
বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ানের কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল তানজিল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বিজিবি ইতোমধ্যেই খোয়াই থানা পুলিশ ও বিএসএফ’র সাথে যোগাযোগ করেছে। দুই দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় কার্যাদির পর লাশ হন্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অপরদিকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল হক খান জহুর আলীর লাশ দেশে নিয়ে আসতে ভারতীয় পুলিশের সাথে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। লাশ ফেরত আনতে বিজিবি-পুলিশ ও বিএসএফ এর মাঝে কয়েকদফা চিঠি চালাচালি হয়। অবশেষে ৯ জানুয়ারী বিকালে বাল্লা চেকপোস্ট দিয়ে কফিন বন্ধী অবস্থায় জহুর আলীর মরদেহ দেশে এনে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে জহুর আলী কিভাবে সীমান্ত এলাকায় গেলেন, কিভাবে কাঁটা তারের বেড়া অতিক্রম করলেন, কেনো গেলেন সেই রহস্য এখনও অনুদ্ঘাটিত। সাদা সেন্ডেলটি কার, জহুর আলীকে কিভাবে কাঁটাতারের ওপারে ঠেলে দেয়া হলো তা এখনও অস্পষ্ট। তবে মরদেহ গোসল দেয়ার সময় তার শরীরের নানান স্থানে নানান ধরণের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তবে ভারত থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, ময়না তদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলে ত্রিপুরা পুলিশ সেই রিপোর্ট প্রেরণের উদ্যোগ নিবে। ত্রিপুরার খোয়াই হাসপাতাল সূত্র জানায়, মৃতদেহে মারাত্মক জখম রয়েছে। তিনি ৩টি জটিল রোগেও ভোগছিলেন। তবে তার শরীরে বিষ বা মাদকদ্রব্য সেবনের কোন আলামত পাওয়া যায়নি।
গতকাল রবিবার বিকেলে নিহত জহুর আলীর পুত্র অলি মিয়াসহ কয়েকজন গ্রামবাসী চুনারুঘাট থানার ওসি নূর আলমের সাথে দেখা করেন। নানা তথ্য উপাত্ত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অলি মিয়া জানান, ১১ জানুয়ারী রাতে এলাকার লোকজন একটি সভায় মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে জনৈক আক্তার মিয়ার নামও আলোচনায় আসে। আক্তার মিয়াকে শুক্রবার রাতে চিমটিবিল বিওপি’র জোয়ানরা ভারতীয় ওয়াকিটকিসহ সীমান্তের ১৯৭০নং পিলারের নিকট থেকে আটক করা হয়। পরে চুনারুঘাট থানায় তাকে সোপর্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে সীমান্ত আইন লঙ্গনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ১১ জানুয়ারী হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল হক খাঁন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং জহুর আলীর বিষয়ে কয়েকজন সংবাদ কর্মীর সাথে কিছু সময় কথা বলেন। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার জন্য চুনারুঘাট ওসি নূর আলমকে নির্দেশও দিলেও এখন পর্যন্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com