বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ১২:০৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
হবিগঞ্জে ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশ নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা মাধবপুরে দুনীর্তি প্রতিরোধ কমিটির বির্তক প্রতিযোগিতা বানিয়াচংয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ॥ দেখার যেন কেউ নেই মাধবপুরে ভাবি ভাতিজিসহ তিনজনকে হত্যার দায়ে তাহেরের মৃত্যুদন্ড বাংলাদেশেও বন্যা ঘটতে পারে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা উজানে বন্যার প্রতিধ্বনি হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজনে দুদকের গণশুনানি শায়েস্তাগঞ্জে ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডাকাতি গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর ওরস শুরু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যা মামলার আসামি স্বামী-স্ত্রী হবিগঞ্জে গ্রেপ্তার নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা দু’জনের কারাদণ্ড
সাতছড়ির স্তন্যপায়ী প্রাণী ‘আসাম বানর’

সাতছড়ির স্তন্যপায়ী প্রাণী ‘আসাম বানর’

 

ওর কথা জানতে পারি বছর দেড়েক আগে একটি ফেইসবুক পোস্টে। কিন্তু এরপর অন্তত তিনবার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গিয়েও ওকে খুঁজে পাইনি। শেষমেশ ২০২৪ সালের মার্চের এক রাতে মান্দার ফুলে পরিযায়ী পাখির ছবি তোলার জন্য তিনজনের টিমে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশে রওনা হলাম। জগদীশপুরে আসার পর শেরপুরের সাংবাদিক বন্ধু মুগনিউর রহমান মনি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন। ফজরের আজানের আগেই পৌঁছে গেলাম সাতছড়িতে।
গাড়ি থেকে ক্যামেরা ব্যাগ নামিয়ে জিনিসপত্র গুছিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই টাওয়ারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। মান্দার ফুলে ভোরের প্রথম পাখির মধুপানের দৃশ্য তোলার জন্যই এত ভোরে ওখানে যাওয়া। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলে একে একে কেশরাজ, কইরদি বা ফুলমাথা টিয়ে, লটকন টিয়ে, মদনা টিয়ে ও হরবোলার আগমন ঘটল। বাদামি কাঠবিড়ালি দেখা গেল কয়েকটা। অনেক সময় বানর-হনুমানরাও আসে। মনে মনে আশা করছিলাম, গত তিনবার এসে যাকে পাইনি, সেই প্রাণীটি হয়তো আসবে। কিন্তু এল না।
বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ টাওয়ার থেকে নেমে এলাম। দুপুরের খাবার সেরে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে বড় পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসলাম। ঘণ্টা দুয়েক ওখানে থেকে কিছু না পেয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। এবারের সাতছড়ি সফরে একটিও নতুন পাখি-প্রাণীর দেখা পেলাম না। হাঁটতে হাঁটতে পার্কের টাওয়ারে ওঠার টিকিট কাউন্টারের সামনে চলে এলাম। ওখানে দুজন লোক সব সময় ডাব নিয়ে বসে থাকে। বেশ তেষ্টা ও ক্ষুধা পেয়েছিল। তাই একটি শাঁসওয়ালা ডাবা খেলাম।
ডাব খেতে খেতে লক্ষ্য করলাম, ওখানে প্রচুর বানরের আনাগোনা। হঠাৎ মনে হলো, এদের মধ্যে তো সেই বানরটিও থাকতে পারে; অতএব তাকে খোঁজা দরকার। যেই চিন্তা সেই কাজ। দুই মিনিটের মধ্যেই অনেক বানরের মাঝখানে সাতছড়ির একমাত্র ভিন্ন বানরটিকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লাম। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ওর শ খানেক ছবি তুললাম। চিড়িয়াখানায় ওকে বহুবার দেখলেও প্রকৃতিতে প্রথম দেখি ভারতের দার্জিলিং থেকে ফেরার পথে একটি দর্শনীয় স্থানে। ছবি তোলার জন্য বানরটির কাছাকাছি গেলে ও আমাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। তবে ওর ছবি তুলেছিলাম। সেই তুলনায় সাতছড়ির একমাত্র পুরুষটি বেশ শান্তশিষ্ট ছিল। তবে দুর্ভাগ্য, হার্ডড্রাইভ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সাতছড়িতে তোলা ওর সব ছবি আটকে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও সেগুলো উদ্ধার করতে পারিনি।
এতক্ষণ সাতছড়ি ও ভারতে দেখা যে বিশেষ প্রজাতির বানরটির কথা বললাম, তা এ দেশের এক বিরল ও বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী ‘আসামি বানর’। আসাম বান্দর বা বুড়া বানর নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম আসামিজ/আসাম/হিমালয়ান ম্যাকাক। সারকোপিথেসিডি গোত্রের প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম গধপধপধ ধংংধসবহংরং। বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন বানরটিকে সাতছড়ি ছাড়া মৌলভীবাজারের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রাঙামাটির শুভলংয়ে দেখার তথ্য রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে দেখা যায়।
এরা মোটামুটি বড় আকারের বানর। তবে অন্যান্য বানর প্রজাতির তুলনায় লেজ বেশ খাটো। নাকের আগা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫১ থেকে ৭৩ সেন্টিমিটার। লেজ ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। পুরুষের ওজন ১০ থেকে ১৪ কেজি এবং স্ত্রীর ওজন ১০ থেকে ১২ কেজি। মাথা বড় ও বর্গাকার। মুখমণ্ডল চওড়া ও গাঢ় বাদামি থেকে লালচে। দেহের ওপরের লোমের রং বাদামি-ধূসর, নিচের লোম সাদাটে-ধূসর। মাথার চাঁদি মসৃণ। প্রাপ্তবয়স্ক বানরের গাল ও থুতনিতে স্পষ্ট হালকা পীতাভ-সাদাটে দাড়ি থাকে।
‘আসামি বানর’ মিশ্র চিরসবুজ পাহাড়ি বনের বাসিন্দা। দিবাচর, বৃক্ষবাসী ও ভূমিচারী প্রাণীগুলো বেশ লাজুক। সচরাচর পুরুষ, স্ত্রী, বাচ্চাসহ ৫ থেকে ১৫টির দলে বাস করে। দলে একাধিক পূর্ণবয়স্ক পুরুষ থাকতে পারে। ফল, পাতা, ফুল, শস্যদানা, কীটপতঙ্গ, ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণী ইত্যাদি খায়। গভীর বনের বাসিন্দা হলেও নেপাল ও ভারতে খাবারের জন্য ফসলের খেতে হানা দেয়ারও তথ্য রয়েছে। নিচু ও মোলায়েম সুরে ‘পিউ-পিউ’ স্বরে ডাকে।
এপ্রিল থেকে জুনে প্রজনন করে। স্ত্রী বানর পাঁচ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। ১৫৮ থেকে ১৭০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চা প্রসব করে। আয়ুষ্কাল প্রায় ১০ বছর।
লেখক-আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com