সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

কওমী শিক্ষার্থীরা সুযোগ নিতে চাইলে আমরা দিতে প্রস্তুুত আছি ধর্ম উপদেষ্টা

কওমী শিক্ষার্থীরা সুযোগ নিতে চাইলে আমরা দিতে প্রস্তুুত আছি ধর্ম উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্ম উপদেষ্টা আল্লামা ড. আ ফ ম খালিদ হুসাইন বলেছেন, কওমী সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা। কারন এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ধর্ম মন্ত্রনালয়ের নয়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের। তবে আমি এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টাসহ সবার সাথে কথা বলেছি। সবাই আমাকে আশ^াস দিয়েছেন। এখন আমাদেরকে দেখতে হবে কওমীর সনদ ও সুবিধা যারা নিতে চান তারা নিতে কতটা প্রস্তুুত। তারা নিতে চাইলে আমরা দিতে প্রস্তুুত আছি। চাকুরী ও কওমী সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে আলেম ওলামাদের মাঝে একটি ফিলসপি কাজ করে সেটি হল দারুল উলুম দেওবন্দের আটটি নীতির একটি হল সরকারের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকা। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা হল আল্লাহর রহমত। এই মাদ্রাসা লোকজনের কলিজার ভিতর আল্লাহর ভয় ফয়দা করে। মানুষের মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি নিশ্চিত করে। আল্লাহর ভয় থাকলে মানুষের মর্যাদা বেড়ে যাবে। সমাজে ২/১জন আলেমের জন্য ফুল জামাতকে দোষী সাব্যস্থ করা যাবে না। তিনি গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ধুলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আল্লামা আব্দুর রহমান শায়খে ধুলিয়ার “জীবন ও কর্ম” নামে একটি গ্রন্থের প্রকাশনা এবং তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান মেহমানের বক্তৃতায় একথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, মানুষ ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে যায়। প্রয়োজনে লক্ষ লোককে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করে না। কিন্তু পাগলামি কমে যায় যখন মাথার উপর ডান্ডা পড়ে। রোমানিয়ার চসেস্কুর ক্ষমতার লোভের পরিণতি ছিল তাকে ৫০টি গুলি দিয়ে হত্যা করা হয়। লোভী মানুষরা যেখানে টাকা ও জমি দেখে সেখানে হামলা করে। টাকার জন্য এই পাগলামি বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে চোর,ডাকাত ও ঘুষখোরদের হজ¦ও আল্লাহ কবুল করেন না। উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার ৮মাস দায়িত্ব পালনকালে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়েছে। এবার হজে¦র খরচ ১ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সরকারী টাকায় এখন কেউ হজে¦ যেতে পারবে না। এবার আমরা হাজীদের সেবার জন্য ২শ সরকারী ডাক্তার,নার্স, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়ে যাব। সেখানে আমরা ৪টি হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছি যেখানে ডায়ালাইসিস ও হার্টের অপারেশন করা সম্ভব হবে। হজ¦ সেবার জন্য আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি। ২০ এপ্রিল সেটির উদ্বোধন হবে। হাজীরা মোবাইলে টিপ দিয়ে তার লাগেজ কোথায় তা জানতে পারবে এ্যাপস এর মাধ্যমে। হজে¦র দিনে কি কি আমল ও কর্মসূচি তাও জানা যাবে। হজ¦ সিস্টেমকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা হয়েছে। সকল হাজীকে ইসলামী ব্যাংক থেকে কার্ড দেয়া হবে। এতে কারও সাথে করে টাকা নিতে হবে না। এই কার্ড দিয়ে সৌদি আরবের যে কোন এটিএম বুথ থেকে রিয়াল উঠানো যাবে। মার্কেটে কেনাকাটা করা যাবে। দেশের ব্যবহৃত মোবাইল সিমকে রুমিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বল্প ব্যয়ে মক্কা, মদীনা ও জেদ্ধায় দেশী সিম ব্যবহার করা যাবে। হাজীদের সেবার জন্য সৌদিতে অধ্যয়নরত ছাত্রসহ লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে। উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্নস্থানে যাদেরকে নিয়োগ দিয়েছি তারা সবাই আল্লাহওয়ালা। তারা কোন ঘুষখায়না। আমরা মসজিদ পরিচালনার জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করেছি। এখান কেউ চাইলেই কোন ইমামকে বহিস্কার করতে পারবে না। ইমাম নিয়োগেরও নীতিমালা হবে। ইমাম মোয়াজ্জিনের বেতনের জন্য ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী বেতন কাঠামো করা হবে। ইমাম ও মোয়াজ্জিনের মর্যাদা বাড়ানোর জন্য আমরা প্রতিবছর ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৪ জেলার সেরা ইমাম ও মোয়াজ্জিনকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করব। তিনি আরও বলেন, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী থেকে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদেরকে সুদ ও জামানত ছাড়া ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই ঋণের কোন খেলাপী নেই। অসুস্থ ইমামদের জন্য এককালীন অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি শায়খে ধুলিয়ার কর্মজীবন ও মানুষের কল্যানে জীবন বিলিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্টানে প্রধান অতিথি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সহ-সভাপতি স্যায়িদ আসজাদ মাদানী। তিনি বলেন, রাসুলের আদর্শ আমাদেরকে মানতে হবে। রাসুলের আদর্শই আমাদের মুক্তির পথ। আমাদেরকে ৪টি বিষয়ে আমল করতে হবে। সেটি হল এখলাছ, কোন কাজে দৃঢ় থাকা, সৃষ্টির সেবা করা এবং সুন্নাহর অনুসরন করা। আর-রাহমান ফাউন্ডেশন ধুলিয়া ঘাটুয়া,আমিরপুর বানিয়াচং এর আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধুলিয়া র. এর সাহেবজাদা মাওলানা হাবিবুর রহমান। অতিথি হিসাবে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আলী মুকিব, মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক শাহ নজরুল ইসলাম, মাওলানা জুনাইদ আহমেদ কাটখালীসহ দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম। অনুষ্টান পরিচালনা করেন মিম সুফিয়ান। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ধুলিয়া গ্রামের আলোকিত ব্যাক্তিত্ব ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক আল্লামা আব্দুর রহমান শায়খে ধুলিয়া বহু মসজিদ ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্টপোষক ছিলেন। এই দেশ বরেণ্য আলেম ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী স্যায়িদ হোসাইন আহমেদ মাদানীর ছাত্র ও খলিফা। মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, আব্দুর রব ইউসুফি, নুরুল ইসলাম ওলিপুরী ও নুরুল ইসলাম খানের মত দেশ বরেণ্য ওলামাদের সৃষ্টি করেছেন শিক্ষক হিসাবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনবার অংশ নেয়া এই কৃতি পুরুষ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com