স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অবশেষে বহুল আলোচিত সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কর্তৃক গৃহবধু গণধর্ষণের মামলার বিচারকাজ দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে নতুন করে শুরু হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশের পর মামলার নথিপত্র দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসার পর আদালতে শুনানি শেষে আগামী ১৩ মে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন বিচারক। এখন থেকে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কর্তৃক স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের পৃথক দুটি মামলার বিচার কাজ একসাথে চলবে। ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলেন- সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের ছেলে মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর আবুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলার সাক্ষ্য নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এজন্য আগামী ১৩ মে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
তবে বাদীপক্ষের প্যানেল আইনজীবীর প্রধান শহীদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মামলার বিষয়ে বাদী দীর্ঘদিন থেকে উদাসীন। উচ্চ আদালতের আদেশের পরই বাদী কোনও যোগাযোগ করেননি। যতটুকু শুনেছি, বাদী ট্রাইব্যুনালে অন্য দুজন আইনজীবীকে দিয়ে দরখাস্ত দিয়েছেন। ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পদে পদে ছিল নানান প্রতিবন্ধকতা। এমনকি উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে আপিল দায়ের ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালে মামলার বাদী নেতাদের কথায় চলাফেরা করতেন। সেই সঙ্গে তাদের হুকুমও তিনি মেনে চলতেন। তিনি মামলাটি আপস করার জন্য মোটা অংকের টাকাও নিয়েছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মামলার নথিপত্র রবিবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা গ্রহণ করেন। এর আগে গত ১৭ মার্চ সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা বদলি করতে হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে এখন থেকে গণধর্ষণের মামলায় দুই অভিযোগের বিচার চলবে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় গত ১৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ খারিজ করে এ আদেশ দেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে দক্ষিণ সুরমার এক যুবক তার নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছিলেন। সন্ধ্যার পর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন তারা। এ সময় কয়েকজন যুবক তাদের ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে তাদের জিম্মি করে গাড়িতে তুলে কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। পরে জানা যায়, ধর্ষণকারী ওই যুবকরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় গত বছরের জানুয়ারিতে ধর্ষণ মামলার ও চলতি বছরের মে মাসে চাঁদাবাজির মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুই হয়নি। আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের ছেলে মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫) অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। ঘটনার মাত্র ২ মাস ৮ দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেওয়া হয়। আসামি রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমকে ধর্ষণে সহায়তা করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন।
Leave a Reply