বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শ্রীমঙ্গলের আনারস যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তদবীরে পার পেয়ে যাবার অভিযোগ ধরা ছোঁয়ার বাহিরে লাখাইর যুবলীগ নেতা নোমান বিদ্যুৎস্পৃষ্টে গরু মৃত্যুর ঘটনায় কৃষককে ১ লাখ টাকা সহায়তা দিল পল্লী বিদ্যুৎ পৃথক অভিযানে ১২ লাখ টাকার চোরাইপণ্যসহ ও মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে বিজিবি লাখাইয়ে পৃথক অভিযানে খুনের মামলার আসামী সহ গ্রেফতার ৩ মাচায় গ্রীষ্মকালীন নানা রঙের তরমুজ চাষে কৃষক আবারও বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ৪৪ জনকে পুশইন করল বিএসএফ হবিগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলার উদ্বোধন বাহুবলের মহাশয় বাজারে দুঃসাহসিক চুরি ॥ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা নবীগঞ্জের চেয়ারম্যান রানাকে সিলেটে ‘গণপিটুনি’ পুলিশে দিল জনতা
কুশিয়ারা ডাইক প্রকল্পে ৫৭৩ কোটি টাকা নয়ছয়

কুশিয়ারা ডাইক প্রকল্পে ৫৭৩ কোটি টাকা নয়ছয়

 



  চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দেশের উল্লেখ যোগ্য নদীগুলোতে বেড়েছে পানি। একই অবস্থা হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ  নদীরও। শুক্রবার পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্য বলছে, বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। পাউবো জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তীর উপচে পড়ায় প্লাবিত হচ্ছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বাঁধ বা কুশিয়ারা ডাইক। রাধাপুর গ্রামের নানু মিয়ার বাড়িসংলগ্ন স্থানে ডাইকে ব্যাপক ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। অপর অংশ দিয়ে ডাইকের ভেতরে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। পানি প্রবেশের ফলে বড় ধরনের ভাঙনে নবীগঞ্জের ৮ থেকে ৯টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া জানান, কুশিয়ারা নদী উপচে তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। ডাইকে ফাটলের পাশাপাশি একটি অংশে পানি ভেতরে ঢুকছে। স্থানীয়ভাবে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নদীর তীরবর্তী প্রায় ১০টি গ্রামে ঢুকছে নদীর পানি। অন্যান্য এলাকা থেকেও ডাইকে ফাটল ও পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে।
হবিগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম মাহমুদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হবিগঞ্জ সফরে থাকায় যাওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ডাইক নির্মাণের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, হবিগঞ্জ পাউবোর আওতায় পরিচালিত এ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। প্রকল্পের ৫৭৩ কোটি টাকার কাজ নিয়ে গত সরকারের প্রভাবশালীরা নানা নয়ছয় করেছেন। কাজ হয়েছে দায়সারা। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তের দাবিও করেছেন তারা।

কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বাঁধটি নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি কাজ করা হয়েছে দায়সারাভাবে। অল্প সময়েই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ভাঙন সৃষ্টিতে নির্মাণকাজের দুর্বলতা দৃশ্যমান। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন হবিগঞ্জ জেলার ভাটি অঞ্চলের মানুষ।
নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের ফলে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের দুর্বলতা নজরে আসে। প্রতিরক্ষা বাঁধটির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থান দেবে গিয়ে বাঁধের গায়ে ফাটল দেখা দেয়।

সে সময় দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ ছিল না

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজ শুরুর পর থেকে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষায় ব্লক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। মাটিমিশ্রিত বালু, মরা নুড়ি পাথর, ছোট পাথরের জায়গায় বড় পাথর, গোটা পাথর, ইটের খোয়ার মিশ্রণ ব্যবহার এবং মিশ্রণে সঠিক মাত্রার সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার না করার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে এসব কাজে বেপরোয়া দুর্নীতি আর অনিয়ম চালিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। এসবের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সম্পৃক্ততার কথাও জানিয়েছেন অনেকেই।
শেরপুর এলাকার জুয়েল আহমদ বলেন,  জনস্বার্থে প্রকল্প করা আর প্রকল্পের নামে অর্থলুটের ক্ষেত্র সৃষ্টি করা এক কথা নয়। কুশিয়ারা ডাইকের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে। তা না হলে অভিযোগের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কেন হয়নি

তাজপুর এলাকার তাজুল ইসলাম বলেন, ডাইকে নির্মাণ করেছে। পাউবোর কর্মকর্তারা পরিদর্শনের নামে নদীর পাড়ে হেঁটে দপ্তরে ফিরে গেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও পাউবোর কর্মকর্তারা মিলেমিশেই দুর্নীতি করেছেন। অনেক কিছু চোখে দেখে এবং জেনেও স্থানীয়রা ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি।
এদিকে লামা তাজপুরের খোয়াজ উল্লাহ ডাইক নির্মাণে অনিয়মের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ কার কাছে করতাম? কে শুনত কথা? রক্ষকই ভক্ষক হয়ে অর্ধ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে লুটপাট চালিয়েছে দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে। কথা বলতে গেলে মিথ্যা মামলায় শেষ করে দিত। আমরা ধৈর্য ধরেছি সময়ের অপেক্ষায়। সময় এসেছে, প্রকল্প লুটেরাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার।’
নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু জানান, কুশিয়ারা ডাইক নির্মাণের কাজে

প্রকাশ্যে অনিয়ম হয়েছে। মানুষের টাকা লুট করা হয়েছে। এই প্রকল্পের সব হিসাব আদায় করার পাশাপাশি প্রমাণসাপেক্ষে দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ কয়েকটি প্যাকেজের মাধ্যমে চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো মূলত নদী ভাঙন রোধে করা হচ্ছে। এটা ভালো অবস্থায় আছে।’ তবে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ আসতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে সাংবাদিকরা শুধু অনিয়মের কথা বলে যাচ্ছেন। কোথাও সমস্যা হয়নি। আমরা কোনো অনিয়ম পাইনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com