শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শ্রীমঙ্গলের আনারস যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তদবীরে পার পেয়ে যাবার অভিযোগ ধরা ছোঁয়ার বাহিরে লাখাইর যুবলীগ নেতা নোমান বিদ্যুৎস্পৃষ্টে গরু মৃত্যুর ঘটনায় কৃষককে ১ লাখ টাকা সহায়তা দিল পল্লী বিদ্যুৎ পৃথক অভিযানে ১২ লাখ টাকার চোরাইপণ্যসহ ও মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে বিজিবি লাখাইয়ে পৃথক অভিযানে খুনের মামলার আসামী সহ গ্রেফতার ৩ মাচায় গ্রীষ্মকালীন নানা রঙের তরমুজ চাষে কৃষক আবারও বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ৪৪ জনকে পুশইন করল বিএসএফ হবিগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলার উদ্বোধন বাহুবলের মহাশয় বাজারে দুঃসাহসিক চুরি ॥ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা নবীগঞ্জের চেয়ারম্যান রানাকে সিলেটে ‘গণপিটুনি’ পুলিশে দিল জনতা
১৫ বছরে আওয়ামী নেতাদের মদদে নির্মল দেব অপরাধ জগতের ডন

১৫ বছরে আওয়ামী নেতাদের মদদে নির্মল দেব অপরাধ জগতের ডন

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউপি ৩নং ওয়ার্ডের  ইউপি সদস্য নির্মল চন্দ্র দেবের  ভিন্নমুখী দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরে সর্বক্ষেত্রে নানাভাবে লুটপাঠ করছেন। তিনি রেমা চা বাগানে এক সময়ে সহকারী ম্যানেজারের শুন্য পদে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন দূর্নীতি করায় কর্তৃপক্ষ তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। এর আগে তিনি ইউপি অফিসের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে চা শ্রমিকদের ভয় ভীতি  দেখিয়ে এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অবৈধ ক্ষমতা খাটিয়ে বিজয়ী হন। বিগত দ্ধাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী প্রার্থী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ চা শ্রমিকদের ভোট কেনার জন্য নিলেও কোন ভোটারকে কোন টাকা না দিয়ে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে। পরে উপজেলা নির্বাচনে চুনারুঘাটের কুখ্যাত সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা আবু তাহেরের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে সরল প্রাণ চা শ্রমিকদের নেশা পান করিয়ে আবু তাহেরকে বিজয়ী করেন। রেমা চা বাগান ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা হওয়ায় এবং তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার সুবাদে চা বাগানের পাশে ভারতীয় সিংগী ছড়া বিএসএফ ক্যাম্প, সিংগীছড়া বস্তি (খইয়াউরি) ও সেখানকার চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে সম্পর্ক রেখে নেশা পণ্য এনে থাকেন। তিনি গাজীপুর ইউনিয়নের মনিপুরী পাড়া আবাদগাও এলাকার বাসিন্দা হলেও তিনি রেমা চা বাগানেই অবস্থান করেন। শুধু মাত্র চা বাগান ও রেমা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ পাচার, চোরাই কারবার ও চোলাই মদ পান করাসহ ভিন্নমুখী অপরাধের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা বাগান, বস্তি এলাকার অনেকেই অজানা নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নির্মল চন্দ্র দেব এমনই ভাব করেন, যেন তিনি দেশের কিছুই জানেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিংগীছড়া ও ত্রিপুরার বাছাইবাড়ী, ময়নাবিল ঘেষা চেরমা, ঢুগলা বাড়ী, বড়ই তলা দিয়ে চোরাচালানসহ সীমান্ত অঞ্চলে তিনি অপরিচিত নেতা গোছের অনেক লোককে নিয়ে ঘুরাফেরা করেন। এমনকি ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষ মহিলাকে ভারতে প্রেরণ তার প্রধান আয়ের উৎস। তার ভাইরাও একই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। কারো কারো মতে তিনি ভারতীয় বিএস এফ ও গোয়েন্দা সংস্থার সাথে জড়িত। উল্লেখ্য, নির্মল চন্দ্র, পিতা মৃত সুবোধ চন্দ্র দেব ভাসমান মানুষ ছিলেন। জারুলিয়া বাজারে একটি ঝুপড়ি ঘরে থেকে বাজারে বাজারে ছেউ, জিলেপী বিক্রী  করে সংসার চালাতেন। তার ভাইয়েরা তাদের বাবার পথে আয়রোজগার করত।

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর নির্মল গাজীপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হন। ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। নির্মল চন্দ্র দেব একটি পল্লী চিকিৎসকের সনদ বানিয়ে রেমা চা বাগানে চাকুরী নেন। তত কালীন ইউপি চেয়ারম্যান এর সহায়তায় রেমা সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রেমা চা বাগানের গাছ পাচার করে টাকার খনি হাতে আসে। পরে তিনি ওই বাগানের টিলা বাবু পদে চাকুরী বাগিয়ে নেন। খুবই চতুর এবং দুরন্ধর নির্মল বাগানে হট্টগোল বাধিয়ে ফায়দা হাসিলে মেতে উঠেন। অভিযোগ উঠেছে ২০১৪ সালে বাগানের ৫নং লাইনে বিকাল ৩টার সময় চা বাগানের পার্শ্ববর্তী গ্রাম আলীনগরের আমির হোসেনের পুত্র তারানি ওরফে তারা মিয়া ও মিলিক খাঁর পুত্র আলী আকবরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর পেছেনে নির্মল দেবের হাতছানি ছিল বলে এলাকাবাসী জানায়। প্রভাবশালীদের হস্থক্ষেপে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করতে পারেনি ভুক্তভোগী পরিবার। গরীব পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের হত্যাকান্ডের বিচার আজও পায়নি। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী নেতা এমপির ছত্রছায়ায় নির্মল চন্দ্র দেব অপরাধ জগতের ডন হয়ে উঠে। ধরা কে সরাঞ্জান করে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রেমা চা বাগানের গাছ পাচার করে গাজীপুর ইউনিয়নের আবাদগাও গ্রামে ৫০ লাখ টাকা ব্যায় করে বাড়ী তৈরী করে। অন্যান্য ভাইদের বিদেশ প্রেরণসহ এক বোনকে ভারতে বিয়ে দেয়। ক্রমান্বয়ে নির্মল রেমা চা বাগানের সহকারী ম্যানেজারের পদ বাগিয়ে নেয়। কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পরই তার এক ভাইকে পল্লী চিকিৎসকের সনদ যোগিয়ে রেমা চা বাগানে চিকিৎসক পদে চাকুরী নিয়ে দেয়।
নির্মল গাজীপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হওয়ার সুবাদে ১৩ জন পঙ্গু চা শ্রমিকের নামে ৯ হাজার করে ভাতা উত্তোলন করে ৪ হাজার টাকা করে পঙ্গু শ্রমিকদের ৫২ হাজার টাকা দিয়ে  বাকী টাকা আত্মসাৎ করে। আনসারুল হক পিতামৃত ইছার উদ্দীন, যাত্রাগাও, গাজীপুর ইউনিয়ন, চুনারুঘাট এর বাড়ীতে নির্মল দেবের নেতৃত্বে ডাকাতি হয়। টাকা পয়সা সোনাদানা অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায়। চিহ্নিত ডাকাতদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে অভিযোগ করেও ভুক্তভোগী পরিবার কোন বিচার পায়নি। জাতীয় সংসদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও পিপির হস্তক্ষেপে ডাকাতরা পার পেয়ে যায় বলে ভুক্তভোগীরা জানান। নির্মল চন্দ্র দেব আওয়ামী নেতা ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এখনো বীরদর্পে বিচরণ করছেন। আসামপাড়া বাজারে নির্মল টি হাউজ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে এর আড়ালে মাদক ব্যবসা করে আসছেন বলে এলাকাবাসী জানান। এ ব্যাপারে নির্মল দেবের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com