স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলীসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বাদী। গত রবিবার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ দেলোয়ার হোসেনের আদালতে এ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন লাখাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামসুল ইসলাম। আদালত মামলাটি শুনানীর জন্য গতকাল মঙ্গলবার ধার্য্য করেছিলেন। এদিকে মামলার বাদী একইদিন দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন দায়ের করেন।
মামলার বাদি শামসুল ইসলাম বলেন, ‘একই ঘটনায় তিনি বিগত ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন কিন্তু কোনো যুক্তি সংগত কারণ ছাড়াই ২২ সালের ৩ জানুয়ারি মামলাটি খারিজ করে দেন। ঐ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি রিভিশন দায়ের করায় গত রবিবার দায়ের করায় মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। দায়রা জজ মোঃ হাসানুল ইসলাম মামলাটি গ্রহন করে নিম্ন আদালতের রেকর্ড তলব করেছেন।’
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবীতে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি একটি জনসভা আহ্বান করে। হবিগঞ্জ পৌরসভার মাঠ অথবা চিল্ড্রেন পার্কটিতে জনসভা করার অনুমতি চাওয়া হলে অনুমতি দেননি তৎকালীন মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। অনুমতি না পেয়ে শায়েস্তানগরস্থ জেলা বিএনপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেয়। লিখিতভাবে পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়।
সকাল হতে দলের অস্থায়ী অফিসের সামনে একটি ছোট মঞ্চ তৈরীর কাজ শুরু হলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয় এবং গলির পূর্ব, পশ্চিম মুখে পুলিশ ব্যারিকেড দিতে শুরু করে। দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অর্থাৎ বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি ও মন্ত্রী ডঃ খন্দকার মোশারফ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি ও চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জনাব ইকবাল হোসেন শ্যামল সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সভাস্থলে উপস্থিত হন। সভাস্থলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হতে শুরু করে। কিন্তু পুলিশ হবিগঞ্জ শহরের সকল প্রবেশ মুখে চেক পোষ্ট বসিয়ে সভাস্থলে আসা নেতাকর্মীদের আটক ও হয়রানি করতে থাকে। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জনাব আবুল হাশিম, যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব জি কে গউছ, যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক জনাব এনামুল হক সেলিম সহ আহ্বায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ তাদের পূর্বে ঘোষিত কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানান। পুলিশ অহেতুক উত্তেজিত ও মারমুখী আচরণ শুরু করে এবং সভাস্থলে জনতার আসা বন্ধ না হলে গুলি করবে বলে হুমকি দিতে থাকে। এ সময় ছাত্রদলের একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল আসতে থাকলে পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলীর নির্দেশে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক পুলিশ ছাত্রদলের মিছিলের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে ছাত্রদলের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ্ রাজীব আহম্মেদ রিংগনের শরীর ঝাঝড়া হয়ে যায়। তার সারা শরীরে শত শত স্পিন্টারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়। ছাত্র দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানের চোখে গুলির আঘাতে তার ডান চোখ চিরতরে নষ্ট হয়। গুলির আঘাতে হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. সফিকুর রহমান সিতু, আশরাফুল আলম সবুজ, ইয়ামিন মিয়া, তৌহিদুর রহমান অনি, নাজমুল হোসেন অলি সহ অনেকে গুরুতর আহত হন। পুলিশের গুলিতে প্রায় ৩শ নেতাকর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ করেনি। আসামিগণ বাদীসহ জখমী সাক্ষীদেরকে ভয়ভীতিসহ হত্যা মামলা অথবা গ্রীভিয়াস মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন।
Leave a Reply