স্টাফ রির্পোটার ॥ আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় অবৈধভাবে দিনে রাতে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। যে যার মতো করে কৃষি জমি থেকে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি ও বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। অথচ ফসলী জমির উপরিভাগের ছয় থেকে সাত ইঞ্চির মধ্যেই থাকে সব ধরনের জৈব গুণাগুণ। আর তারা এই উর্বর অংশটুকুই কেটে নিচ্ছে। ফলে এসব জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে আশঙ্কাজনক হারে। কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন ২০১৬ এর ৪ এর (১) এ বলা রয়েছে ‘বাংলাদেশের যে সকল কৃষি জমি রহিয়াছে, তাহা এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা করিতে হইবে এবং কোন ভাবেই তাহার ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না’।
এছাড়া ৭ এর (১) এই আইনের ধারার ৪ (১), ৪ (২) অথবা অন্য কোন ধারার বর্ণিত বিধান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য বা লংঘন করিলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেই হউন না কেন সর্বোচ্চ ০৩ (তিন) বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ০৩ (তিন) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং বর্ণিত কৃষি জমি সরকার কর্তৃক বায়েজাপ্ত করা হইবে।
এই আইনের প্রতি বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে মাটি উত্তোলনকারীরা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মচারীদেরকে বশিভূত করে মাটি উত্তোলন করছে মাটিখেকোরা। কর্মকর্তাগণ ভ্রাম্যমান আদালতে বের হবার আগেই অসাধু কর্মচারীরা সতর্কবার্তা পৌঁছে দেয় মাটি খেকোদের নিকট।
সুত্রে জানা যায়, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ফসলি জমিতে এক্সেভেটের দিয়ে সরকারি ভূমি ও ফসলি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মাছ চাষের পুকুর, বসতভিটা ও জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ট্রাক্টরদ্বারা বিভিন্ন স্থানে নিচু ভূমি ভরাট কাজে মাটি বিক্রি করে আসছে মাটি খেকোর দল।
মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশানের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হলেও থেমে নেই মাটি উত্তোলন। এভাবে এক্সেভেটের দিয়ে মাটির গভীর থেকে বালু উত্তোলন করায় পার্শ্ববর্তী ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। কৃষকরা জানান, যেভাবে জমি কেটে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে, এতে ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
এমনচিত্র উপজেলার প্রতিটি হাওরেই দেখা যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা জলসুখা ইউনিয়নের পুবেরবন নামক হাওরের ফসলি জমি থেকে গত ২/৩ দিন যাবৎ ধরে এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়া পাটুলিপাড়া গ্রাম সংলগ্ন শরীফ উদ্দিন অদূরে জমি থেকে মাটি কেটে ট্রাক্টর দ্বারা বিভিন্ন স্থানে নিচু ভূমি ভরাটের কাজে মাটি বিক্রি করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের মাহতাবপুর, রসুলপুর, কামালপুর, কালনিপাড়া, শিবপাসা ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে অবৈধ এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি উত্তোলন করছে। এছাড়া পৌর এলাকার নৌ-টার্মিনাল ঘাট সংলগ্ন এলাকায় সরকারী ভূমি থেকে মাটি উত্তোলন করে ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে বিভিন্ন স্থানের নিচু ভূমি ভরাটে ট্রাক্টর হিসাবে মাটি বিক্রি করে আসছে। স্থানীয়রা জানান, প্রথমে দিনের আলোতে মাটি কাটার কাজ করলেও ভ্রাম্যমান আদালতের ভয়ে রাতে মাটি উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে হাওরগুলোতে। অটো রিক্সাচালকরা বলেন, প্রতিদিন মাটি লোড করা ট্রাক্টর যাতায়াত করার ফলে সড়ক ভেঙে বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে তহশিলদারের মাধ্যমে খোজঁ খবর নিচ্ছেন বলে জানান উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মুজিবুল ইসলাম।
Leave a Reply