নুরুল আমিন, বাল্লা চেকপোষ্ট থেকে ফিরে ॥ ভারতের ত্রিপুরার খোয়াই হাসপাতালে বেলা সাড়ে ১২টায় ময়নাতদন্ত শেষে জহুর আলীর মৃতদেহ বিজিবি ও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ত্রিপুরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বাল্লা চেকপোষ্ট দিয়ে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিজিবি’র পক্ষে ছিলেন বাল্লা ক্যাম্পের সুবেদার নাজমুল ইসলাম ও চুনারুঘাট থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুর রহমান। ভারতের পক্ষে ছিলেন খোয়াই থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবেন্দু দেববর্মা ও বিএসএফ’র কোম্পানী কমান্ডার পুর্নেন্দু। মরদেহটি বাল্লা চেক পোস্ট দিয়ে দেশে আনার পর মৃত জহুর আলীর পুত্র অলি মিয়ার কাছে সমজিয়ে দেয়া হয়। রাত ৮ টায় জানাজা শেষে জহুর আলীকে পারবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, জহুর আলীর মরদেহের ময়না তদন্ত করেন খোয়াই জেলা হাসপাতালের ডাঃ জন দেববর্মা। মৃত জহুর আলীর দেহের বিভিন্ন নমুনা আগরতলা নরসিনগড় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অন্যান্য পরীক্ষার সাথে মরদেহের ডিএনএ টেস্টও করা হবে। তবে জহুর আলী হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই পাওয়া গেছে বলে জানায় খোয়াই থানা পুলিশ।
সোমবার ৬ জানুয়ারী সকালে গুইবিল সীমান্তের ১৯৬৮নং মেইন পিলারের ৫ ও ৬নং সাব পিলারের কাছে ত্রিপুরার গৌড়নগর এলাকা থেকে বিএসএফ এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করে খোয়াই থানা পুলিশের কাছে অজ্ঞাত হিসেবে হস্তান্তর করে। খোয়াই থানা পুলিশ সেই মরদেহ মর্গে পাঠায়। ফেইসবুকে বিষয়টি প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয় এবং ত্রিপুরার খোয়াই হাসপাতালের মর্গে থাকা মরদেহটির একটি ছবি ফেইসবুকে প্রকাশিত হলে সেই মরদেহ বাংলাদেশী বৃদ্ধ জহুর আলীর বলে সনাক্ত করেন স্বজনরা। এরপর চুনারুঘাট থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন ফেসবুকের সূত্র ধরে গাজীপুর ইউনিয়নের ডুলনা গ্রামে গিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেন। মৃত জহুর আলীর একমাত্র পুত্র অলি মিয়া জানান, তার বাবা ঢাকা বসুন্দরা সিটির সিটিএল কোম্পানীতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত শনিবার বাড়িতে আসেন। রবিবার বিকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হন এবং সেই থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তার বাবাকে কেউ খুন করেছে কিনা তা তিনি জানেন না। জহুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বলেন, তার স্বামী যখন ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন তখন তার কাছে ১০/১২টা নতুন লুঙ্গি ছিলো। তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে লুঙ্গির ব্যবসা করবেন বলে জানান। ঢাকা থেকে আসার পর স্বামীর কাছে ১০/১১ হাজার টাকা একটি পলিথিনে মুড়ানো ছিলো বলে জানান তিনি। সেই নতুন লুঙ্গি এবং টাকা সাথে নিয়ে তিনি রবিবার সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফিরেননি। স্ত্রী সুফিয়া বলেন, রবিবার রাত প্রায় ১২টার সময় এলাকার একজন লোক তাকে বলেছে, তার স্বামী অজ্ঞান হয়ে বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যক্ত ধানী জমিতে পড়ে রয়েছেন। সেই খবর পেয়ে তিনিসহ তার আত্মীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে জহুর আলীকে পাননি, তবে তার পায়ের প্লাস্টিকের নীল রঙের স্যান্ডেল, মাফলার ও মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখেন এবং যে পলিথিনে টাকা মুড়ানো ছিলো সেটাও ছেড়া অবস্থায় দেখতে পান তিনি। ঘটনাস্থলের অনতিদূরে সাদা রঙের আরও একজোড়া প্লাস্টিকের স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়। সেই সূত্র ধরে চুনারুঘাট থানার দারোগা দেলোয়ার হোসেন ডুলনা গ্রামে জহুর আলীর বাড়িতে আসেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তিনি দুই জোড়া স্যান্ডেল, মোবাইল ফোন ও টাকা মুড়ানো সেই পলিথিন আলামত হিসেবে জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ানের কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল তানজিল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বিজিবি ইতোমধ্যেই খোয়াই থানা পুলিশ ও বিএসএফ’র সাথে যোগাযোগ করেছে এবং গতকাল বিকালে দুই দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে লাশ হন্তান্তর পক্রিয়া সম্পন্ন করে। লাশ ফেরত আনতে বিজিবি ও বিএসএফ’র মাঝে কয়েকদফা চিঠি চালাচালি হয়।
জহুর আলী কি ভাবে সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া অতিক্রম করলেন তা এখনো প্রশ্নাতীত। সাদা সেন্ডেলটি কার, জহুর আলীকে কিভাবে কাঁটা তারের ওপারে ঠেলে দেয়া হলো তা এখনও অস্পষ্ট। তবে মরদেহে গোসল দেয়ার সময় তার শরীরের নানান স্থানে নানান ধরনের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তবে ভারত থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আসল রহস্য বের হবে বলে জানায় পুলিশ।
Leave a Reply