বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
হবিগঞ্জে ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশ নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা মাধবপুরে দুনীর্তি প্রতিরোধ কমিটির বির্তক প্রতিযোগিতা বানিয়াচংয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ॥ দেখার যেন কেউ নেই মাধবপুরে ভাবি ভাতিজিসহ তিনজনকে হত্যার দায়ে তাহেরের মৃত্যুদন্ড বাংলাদেশেও বন্যা ঘটতে পারে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা উজানে বন্যার প্রতিধ্বনি হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজনে দুদকের গণশুনানি শায়েস্তাগঞ্জে ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডাকাতি গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর ওরস শুরু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যা মামলার আসামি স্বামী-স্ত্রী হবিগঞ্জে গ্রেপ্তার নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা দু’জনের কারাদণ্ড
আব্দুল মজিদ খানের লুটপাট থেকে রেহাই পায়নি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধও

আব্দুল মজিদ খানের লুটপাট থেকে রেহাই পায়নি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধও

 

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। গুটিকয়েক সংসদ সদস্য গ্রেফতার ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকেই। কিন্তু বিগত ১৫ বছর এক নাগাড়ে লুটপাটকারী হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আব্দুল মজিদ খানও হয়েছেন নিরুদ্দেশ। বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় উন্নয়নের নামে ৩ টার্মের এই সংসদ সদস্য হাজার কোটি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার এপিএস সহ প্রধান প্রধান সহযোগীরাও হবিগঞ্জসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বিলাশ বহুল ফ্লাটের মালিক। ভাটি বাংলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় উন্নয়ন না করলেও উন্নয়নের নামে লুটে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে মাকালকান্দি সরকারী জমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নামে লুটে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। শহীদ পরিবার ও স্থানীয়দের কোন মতামত না নিয়েই অথৈ পানি বেষ্টিত স্থানে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন স্মৃতিসৌধ। কিন্তু মহান যুদ্ধে শহীদের নামে নামফলক না থাকলেও তার নাম সম্বলিত নেমপ্লেট ঠিকই স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। আব্দুল মজিদ খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে একটি দু-চালা টিনের ঘরে বসবাস করতেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরই বদলে যায় মজিদ খানের ভাগ্যের চাকা। গড়ে তুলেন হবিগঞ্জ শহরে বিলাশ বহুল বাড়ী। আলিশান এই বাড়ীতে বসেই বিভিন্ন দূনীর্তির পরিকল্পনা করতেন। ভূয়া প্রকল্প দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া যায় তার জন্য তার ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে এলাকায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন মজিদ খান। বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকায় যে কোন সরকারী কাজ হলেই মোটা অংকের কমিশন দিতে হত তাকে। কমিশন ছাড়া কোন ঠিকাদার কাজ করলেই তার উপর নেমে আসত অত্যাচারের খড়গ। উপজেলা প্রত্যেকটি সরকারী দপ্তর মজিদ খানের নিয়োজিত লোকদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হত। কোন দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা মজিদ খানের কথার বাইরে কোন কাজ করতে চাইলেই উপজেলার মাসিক সভায় ওই অফিসারদের তুলোধুনো করে ছাড়তেন তার অনুগত লোকদের দিয়ে। সরকারী দপ্তরের যে কোন কাজ করতে হলে মজিদ খানের পছন্দের লোক ব্যতিত অন্য কেউ সেটা করার সাহস পেতনা। কৃষি বিভাগ কতৃর্ক সরকারীভাবে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের কৃষি উপকরণ দেয়ার ক্ষেত্রেও ছিল মজিদ খানের একক আধিপত্য। বানিয়াচং এর কবিরপুর গ্রামের হাসিম উল্লার পুত্র এক সময়ে নাম ধারণ করেন আব্দুল মজিদ খান। পিতা খান না হলেও তিনি নামের শেষে খান জুড়ে দিয়ে বংশ মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু মূলত তিনি একজন নিঃসন্তান। নিঃসন্তান ওই ব্যক্তির অবৈধ বিত্তভৈববের প্রতি এত মোহ কেন তা অনেকেরই প্রশ্ন? গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর সুচতুর আব্দুল মজিদ খানও গা ঢাকা দেন। এখনো তার কোন সন্ধান জানে না কেউ। এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ন্যাপ (মোজ্জাফর) রাজনীতি করতেন। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব শাহ এএমএস কিবরিয়া হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হলে অতিআগ্রহী তিনি মামলার বাদী হয়ে লাইম লাইটে চলে আসেন। নৈতিকভাবে চরিত্রহীন আব্দুল মজিদ খানের নারী ঘটিত অনেক কেলেংকারীর ঘটনাও সমাজে চাউর আছে। সুচতুর আব্দুল মজিদ খান এখনো দেশের অভ্যন্তরেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি দূর্নীতিবাজ, লুটেরা হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আব্দুল মজিদ খানকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহবান এলাকাবাসী। গরীব ঘরের সন্তান হলেও সংসদ সদস্য হওয়ার পর আলাদিনের চেরাগ পাওয়া আব্দুল মজিদ খানের দেশে বিদেশে রয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ ও বিত্তভৈবব। দুদকের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে আব্দুল মজিদ খানকে আইনের আওতায় আনার দাবী এলাকাবাসীর।
উল্লেখ্য, মজিদ খান ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে গা ঢাকা দিয়ে চলে যায় চুনারুঘাটে তার ভায়রা ভাই জায়েদ চৌধুরীর বাসায় আশ্রয় নেন। পরে ভারত পাড়ি দিয়েছেন না ঢাকায় আত্মগোপন করে আছেন তা এখনো কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। সুচতুর আব্দুল মজিদ খান আওয়ামী লীগে কোন্দল সৃষ্টি করে তার মতের বিরুদ্ধের নেতাকর্মীদের বিগত ১৫ বছরে নানা রকম নির্যাতন করার অভিযোগও আছে। এমনকি কোন কোন জনপ্রতিনিধির নামে হাফ ডজনের অধিক মামলাও দায়ের করিয়েছেন মজিদ খান এমন অভিযোগও রয়েছে। ইউনিয়ন, উপজেলা নির্বাচনে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে তার মতাদর্শী ও অর্থ বাণিজ্য করে মনোনয়ন দিয়েছেন অনেককে। সাবেক সাংসদ আব্দুল মজিদ খান হবিগঞ্জ-২ আসনের এক ভয়ংকর দানব হয়ে উঠেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্মম পতনের পর মজিদ খান গা ঢাকা দিয়েছেন তার দুস্কর্মের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com