স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীতে টানা বাগান বন্ধ, শ্রমিক অসন্তোষ, ধর্মঘট, গ্যাস বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ ও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে চা বাগানে। ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে ভ্যালীতে ৭ লাখ কেজি চা পাতা কম উৎপাদন হয়েছে। এদিকে বকেয়া মজুরির দাবিতে ন্যাশনাল টি কোম্পানীর(এনটিসি) ৫টি চা বাগান টানা আড়াই মাস এবং দেউন্দি টি কোম্পানীর ৪টি বাগান গ্যাস বিদ্যুতের কারণে ৩ মাস বন্ধ থাকায় বাগানগুলোতে বিগত বছরের চেয়ে ২০ লাখ কেজি চা কম উৎপাদন হয়েছে। চুুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালির অধীনে ছোটবড় ২৫টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি চা উৎপাদন হয়। ২০২৪ সালে এনটিসির মালিকানাধীন চন্ডিছড়া, পারকুল, সাতছড়ি, তেলিয়াপাড়া, নাসিমাবাদ চা বাগানে শ্রমিক আন্দোলনের কারণে প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকে। এতে এসব চা বাগানের চা উত্তোলনের ভরা মওসুমে বাগান বন্ধ থাকায় প্রায় ১০ লাখ কেজি পাতা উৎপাদন কম হয়। ২০২৩ সালে এসব চা বাগানের মধ্যে দেউন্দি টি কোম্পানীল নয়াপাড়া চা বাগানে ৮৯.২৯ শতাংশ. জগদীশপুর চা বাগানে ৩০.৫৯ শতাংশ, এনটিসির চন্ডিছড়া চা বাগানে ১৫.৫৩ শতাংশ. তেলিয়াপাড়া চা বাগানে ২০.৯১ শতাংশ এবং দেউন্দি চা বাগানে ১০..০৭ শতাংশ চা কম উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া দেউন্দি টি কোম্পানীর দেউন্দি, লালচান্দ ও নোয়াপাড়াসহ ৪টি বাগান গ্যাস বিদ্যুত বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্চিন্ন থাকায় প্রায় ৩ মাস বাগান বন্ধ থাকে। বিশেষ করে লালচান্দ চা বাগানে উৎপাদন এক চতুর্থাংশ কমে যায়। ২০২৪ সালে এ ভ্যালির ২৫টি বাগানে ১ কোটি ১২ লাখ ৯২ হাজার ৫শ ৭২ কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালে এসববাগানে চা পাতা উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ৫৭ হাজার ৮শ ৪২ কেজি। সে হিসেবে ২০২৪ সালে প্রায় ৭ লাখ কেজি বা ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে বাগানগুলো খরার কবলে পড়ে। এরই মধ্যে আগষ্ট মাসে এনটিসির বাগানগুলো আড়াই মাস বন্ধ এবং শুরুর দিকে দেউন্দি টি কোম্পানীর চা বাগানগুলো শ্রমিক আন্দোলনে কবলে পড়ে। এছাড়া চায়ের গাছে আক্রমণ করে ‘রেড স্পাইডার’ ও ‘হেলোফিলিটস মশা’। এসব কারণে উৎপাদন কমে গেছে। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাসে বাগানে ৬০ শতাংশ চা পাতা উৎপাদন হয়। কিন্তুু এ সময়ের ভেতরে শ্রকিরা ৫টি বাগানে টানা আড়াই মাস বাগান বন্ধ রাখায় এসব বাগানে ৩০ শতাংশ চা পাতার উৎপাদন কমে যায়। অন্যদিকে, খরা, রেড স্পাইডার ও হেলোফিলিটস মশার আক্রমণ এবং খরচ বাড়লেও নিলামে বাড়েনি চায়ের দাম। এসব কারণে গত বছর ভ্যালীল ২৫টি বাগানে উৎপাদন কমে গেছে। লালচান্দ চা বাগানের ম্যানেজার মোফাজ্জেল হোসেন জানান, তাদের বাগানে গ্যাস ও বিদ্যুত বিল বকেয়ার কারণে কয়েক মাস বাগান বন্ধ থাকে। শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে ক্ষতির মধ্যে পড়ে বাগানগুলো। চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক ও লস্করপুর ভ্যালির সভাপতি সেলিমুর রহমান সেলিম জানান, গত বছর শ্রমিক অবরোধের কারণে এনটিসির বাগানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে বিদ্যুতের লোডশেডিং তো ছিলই। এছাড়া বৈরী আবহাওয়া ও নানা রোগের আক্রমণের ফলে চা শিল্প এখন খারাপ সময় অতিবাহিত করছে।
Leave a Reply