রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ১০:১৬ অপরাহ্ন

বালু ব্যবসার নামে ‘মা এন্টারপ্রাইজের’ মতিউরের প্রতারণা

বালু ব্যবসার নামে ‘মা এন্টারপ্রাইজের’ মতিউরের প্রতারণা

 

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি॥ নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর এক বালু ব্যবসায়ীর (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, তাদের কয়েক কোটি টাকা ঠকিয়ে এখন লাপাত্তা এক সময়ের সহযোগী মতিউর রহমান নামের ওই বালু ব্যবসায়ী। অভিযোগকারীরা জানান, মতিউর তাঁর লাইসেন্স ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন, যা অন্যরা বুঝতে পারেননি। কথা ছিল সেই লাইসেন্সে বালু উত্তোলনের পর তা বিক্রি করে ভাগের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে অংশীদারদের। এই কথায় তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা আদায় করলেও তাদের টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার হিড়িক পড়েছে। নদীর বালু তোলা নিয়ে চলছে নানা রকম প্রতারণা। তেমনি একটি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। তাদের প্রায় দুই কোটি টাকা বেহাত হয়েছে মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমানের কারণে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালুর অনুমতি পেয়েছেন বলে এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচার করেন। পরে তিনি শেয়ার বিক্রির কথা জানান দেন। যার ভিত্তিতে ১৬টি শেয়ার তিনি বিক্রি করবেন বলে জানান। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে যোগাযোগ করেন শেরপুর মুক্তানগর রিসোর্টের মালিক জাবেদ রনি আহমদের সঙ্গে। আলোচনার পর জাবেদ রনি ও তাঁর বন্ধু ইমরান আহমদের কাছে থেকে ব্যাংক একাউন্ডের মাধ্যমে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা নেন মতিউর। এর বিপরীতে কোনো লাভ বা শেয়ার না দেওয়ায় তারা সিলেট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, মামলায় আসামি মতিউর রহমান, বাদী ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদের নাম উল্লেখ করেছেন। মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলনের জন্য জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্গত খানপুর মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে জমি লিজ নেওয়ার কথা জানান এবং সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছেন বলে অনুমতিপত্র দেখান। তবে বালু উত্তোলনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। তাই ১৬টি শেয়ার (প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা) বিক্রি করবেন। তখন বাদী ইমরান ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ আসামির কাছ থেকে চারটি শেয়ার ক্রয় করলে আলোচনা সাপেক্ষে ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনিকে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ছাড় দেন এবং চারটি শেয়ারের দাম একত্রে এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। সে মোতাবেক ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি ৪ নম্বর সাক্ষীর বাড়িতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নগদ তিন লাখ টাকা আসামিকে দেওয়া হয়। যা আসামির ব্যবসায়িক প্যাডে করা চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে বাকি ৯৭ লাখ টাকা বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষী পরিশোধ করার পর আসামি মতিউরের সঙ্গে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে সম্মত হন এবং চুক্তির শর্তমতে ব্যবসার লভ্যাংশ প্রতি মাস শেষে হিসাব করে চারটি শেয়ারের বিপরীতে ১৬ অংশ বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আসামি নিজে ও তাঁর লোক মারফত ব্যাংকের মাধ্যমে ও নগদে সর্বমোট এক কোটি ২৯ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। যাতে বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীর চারটি শেয়ার বাবদ এক কোটি টাকা এবং অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৯ লাখ টাকা। কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ব্যবসার মাসিক হিসাব সম্পর্কে আসামি মতিউর অংশীজনের কোনো হিসাব বুঝিয়ে দেননি। একপর্যায়ে মতিউর রহমান গা-ঢাকা দেন। ইমরান আহমদ চৌধুরী জানান, বালু ব্যবসায়ী মতিউর প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে এখন আত্মগোপনে রয়েছে। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রনি আহমদ বলেন, কয়েক বন্ধু মিলে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা তাঁকে দিয়েছেন। এ ছাড়া নগদে আরও ৫০ লাখ টাকা বিভিন্নজনের কাছে থেকে তাঁকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন। সে নারায়ণগঞ্জের একজন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আরও ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন যার চুক্তিনামার সাক্ষীও তিনি। অভিযোগ ও মামলার ব্যাপারে জানতে মা এন্টারপ্রাইজের মতিউর রহমানের মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com