নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমনকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহাম্মদ ও হবিগঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে ডিএমপিতে কর্মরত) মো. শহীদুল ইসলামসহ ১২ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই মামলা দায়ের করেন বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার গণিপুর মহল্লার বাসিন্দা ও নোয়াখালী জেলা যুবদল সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন। মামলাটি আমলে নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নোয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আদেশ দিয়েছেন জেলা জজ। আদালত। নোয়াখালী আদালতর কোর্ট পরিদর্শক-১ মো. শাহ আলম সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। নোয়াখালী জেলা জজ আদালতে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর কুমিল্লার নানুপুর (নানুয়া দীঘির পাড়) এলাকায় একটি পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখাকে কেন্দ্র করে দেশে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনার জের ধরে কথিপয় উগ্রবাদী লোকজন ১৫ আক্টোবর নোয়াখালীর চৌমুহনী বাজারের অধিকাংশ মন্দিরে ভাংচুর চালায়। এ ভাংচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহাম্মদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আনোয়ার হোসেন নির্দেশে বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজুল্লাপুর গ্রামের আবু হানিফের ছেলে মো. ফয়সাল ইনাম কমলকে তার বাড়ি থেকে আটক করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমুলক জনাবন্দি আদায় করে। জবানবন্দিতে জি এস সুমনসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করার জন্য চাপ দেয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ডিবি পুলিশের শিখানো কথা অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে কমল মঞ্জুরুল আজিম সুমনের নাম বলতে বাধ্য হয়। এরপর ২৭ আক্টোবর সুমনকে রাঙ্গামাটি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তার চোখ ও হাত-পা বেধেঁ প্রথমে নোয়াখালী ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। পরে তাকে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাকে আদালত থেকে রিমান্ডে এনে নোয়াখালীর সাবেক পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম প্রতিদিন মারধর, ইলেকট্রিকসহ অমানবিক নির্যাতন শেষে হাত পা বেধে মেঝেতে ফেলে রাখত। পুলিশ সুপার সুমনকে চোখ বেধে রাতের বেলায় ক্রসফায়ারের জন্য অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। ক্রসফায়ার ও নির্যাতন না করার শর্তে এসপি দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। তার দাবিকৃত টাকা না দিলে সুমনকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে সুমনের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনরা তিন দফায় এক কোটি টাকা দিতে বাধ্য হন। পুলিশের অমানবিক নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
Leave a Reply