চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার(জরিপকারী) আবুল কালাম প্রায় ১৪ বছর ধরে চুনারুঘাটে অনিয়ম দুনীতি করার অভিযো উঠেছে।
অভিযোগে প্রকাশ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অনিয়ম দুনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে আবুল কালাম। দুর্নীতির দায়ে বদলির আদেশ হলেও সাবেক সরকারের দলীয় মন্ত্রী ও তার দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এখনও চুনারুঘাটে বহাল তবিয়তে তিনি। এছাড়াও উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলীর স্থলে সার্ভেয়ারকে (জরিপকারী) দিয়ে কাজ তদারকি করানো হচ্ছে। ফলে কাজের মান যথাযথ হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। উপজেলা এলজিইডির এক কর্মকর্তা জানান, এ কার্যালয়ে একজন উপজেলা প্রকৌশলী, দুজন উপসহকারী প্রকৌশলী, একজন নকশাকার কাম উপসহকারী প্রকৌশলী ও একজন জরিপকারী আছেন। নিয়ম অনুযায়ী, উপজেলায় এলজিইডির অধীন যেসব কাজ হয় উপজেলা প্রকৌশলী সার্বিকভাবে সেগুলোর দায়িত্বে থাকেন। তিনি ঠিক করে দেন উপসহকারী প্রকৌশলীরা কে কোন কাজ দেখবেন। দায়িত্ব অনুযায়ী উপসহকারী প্রকৌশলীরা সরাসরি সে সব কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন ও কাজ দেখাশোনা করবেন। নিয়ম অনুযায়ী, কাজ শেষ হলে তাঁরাই বিল করবেন। আর জরিপকারীর দায়িত্ব হলো কাজের আগে জরিপ করা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, চুনারুঘাট উপজেলা এলজিইডিতে চলছে উল্টোটা। জরিপকারী আবুল কালাম কাজের মান দেখছেন। ওই কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারদের সঙ্গে রফাদফা করতে আবুল কালামকে ব্যবহার করছেন ওই দপ্তরের কর্মকর্তারা। উপজেলা প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত এক কাগজে দেখা যায়, উপজেলায় এখন বেশ কয়েকটি কাজ চলছে। এর মধ্যে অধিকাংশ কাজ দেখাশোনা করছেন আবুল কালাম । বাকি কাজ দেখছেন উপসহকারী প্রকৌশলী মো: শাহিন আহমেদ। কার্যালয়ের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জরিপকারীকে দিয়ে তদারকি করানোয় উপসহকারী প্রকৌশলীরা কাজ করার আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। এদিকে যেগুলো জরিপকারীর চোখে ধরা পড়েনি সেগুলো প্রকাশ্যে আসলে তিনি নয়ছয় বুঝান। এরআগে আবুল কালাম আজাদ ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে এক ঠিকাদার জেলাপ্রশাসক বরাবরে ১৩ মার্চ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার বেপরোয়া দুর্নীতিতে জড়িত আবুল কালাম উপজেলার সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দে বিভিন্ন প্রকল্পে নাম মাত্র কাজ করিয়েই সংশ্লিষ্টদের বিল উত্তোলনে সহায়তা করা, প্রকল্পে কাজ না হলেও শতভাগ কাজের প্রত্যয়নপত্র দেয়া, পুরনো কাজ দেখিয়ে নতুন বরাদ্দের উন্নয়নকাজের বিল হাতিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এলজিডি অফিসের সকল অপকর্মের হোতা সার্ভেয়ার আবুল কালাম । এক কথায় পুরো চুনারুঘাট উপজেলার এলজিইডি অফিসের সকল অনিয়মের সাথে জড়িত এই কালাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ চুনারুঘাট এলজিইডিতে একই কর্মস্থলে প্রায় ১৪ বছর। দীর্ঘ সময় এক কর্মস্থলে থাকার সুবাদে কিছু দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সুযোগে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দ কাজে হেরফের করে নিজে যেমন আখের গুছিয়েছেন, তেমনি কিছু দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারকে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি তার পছন্দের ঠিকাদারদের সাথে আতাঁত করে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারি করে যাচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও স্কুলের ভবন নির্মাণে এসব অনিয়মও রয়েছে । ফলে ভাল মানের কাজ না হওয়ায় কিছুদিন পরপর সংস্কার করতে হচ্ছে। অপরদিকে প্রতিটি উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ থেকে ঠিকাদারদেয় কাছ থেকে শতকরা পাঁচ পার্সেন্ট টাকা উৎকোচ নেওয়া হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ । বিগত ২০২২ সালে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বদলি হলেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের তদবির ও উর্ধ্বতনদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর
চুনারুঘাটেই এখনও বহাল আছেন। অভিযোগের বিষয়ে সার্ভেয়ার আবুল কালাম বলেন,সব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতেই আমার বদলি স্টে করা হয়েছে । আমি ১৪ বছর যাবত এখানে আছি এটা সত্য। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সর্দার জানান, কাজের সংখ্যা বেশি হলেও কাজগুলো ছোট ছোট। তাঁকে (জরিপকারী) দিয়ে ছোট ছোট কাজ করানো হয়।
Leave a Reply