সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন

চুনারুঘাটে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন

চুনারুঘাটে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন

বিয়ের আশ্বাসে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনায় বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া আসামি কাছুম আলীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে ধর্ষণের ফলে ভূমিষ্ঠ শিশুর ভরণ-পোষণ রাষ্ট্রকে বহনের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। আইন অনুসারে,  ওই ভরণ-পোষণের জন্য দেওয়া অর্থ সরকার ধর্ষকের কাছে থেকে আদায় করতে পারবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।

এরআগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলার রায় ঘোষণা করে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শরীফুজ্জামান মজুমদার। ভিকটিমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আক্তার হোসেন ও সৈয়দ আলতাফ হোসেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, বিয়ের কথা বলে ভিকটিমকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের টিলাগাঁও এলাকার ছিদ্দিক আলীর ছেলে কাছুম আলী একাধিকবার ধর্ষণ করে। ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ সেন্ট্রাল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান ভিকটিম। এতে গর্ভে সন্তান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। গর্ভধারণের পর কাছুম আলী তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এরপর ২০০৬ সালের শুরুতে কাছুম আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এর মধ্যে ভিকটিম একটি সন্তানের জন্ম দেন।

ওই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ আসামিকে খালাস দেন। এ রায় বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ভিকটিম। ওই আবেদনের পর হাইকোর্ট রুল জারি করে। পরে সেই রুল মঞ্জুর করেন বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আইনজীবীরা জানান, আসামিপক্ষ স্থানীয়ভাবে আপসের কথা বলে। এরপর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ না হওয়ার কথা বলে হবিগঞ্জের নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আসামিকে খালাস দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ভিকটিম হাইকোর্টে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১এ ধারায় আবেদন করে। হাইকোর্ট ২০২১ সালের ৩০ মে রুল জারি করে এবং অধস্তন আদালতের নথি তলব করে। হাইকোর্ট রুল শুনানি শেষে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল এবং আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়। আর ভিকটিমের সন্তানের লালন-পালন করার বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৩ ধারা মোতাবেক নির্দেশনা দিয়েছে।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায় রদ ও রহিত করা হলো। এক থেকে চার নম্বর সাক্ষীর আলোকে অভিযুক্ত কাছুম আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হলো এবং তাকে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো এবং অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো, যা ভিকটিম প্রাপ্য হবেন। অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাভোগ করার জন্য আদেশ দেওয়া হলো। পাশাপাশি আসামিকে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হলো।

আদালত রায়ে আরও বলেন, আইনের ১৩ ধারা মোতাবেক ভিকটিমের আজীবন ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্ব ধর্ষকের ওপর বর্তাবে। তাদের সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। আইনের ১৩(১)(গ) ধারায় বিধান কার্যকর করার নিমিত্তে এই রায় ও আদেশের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হোক। তিনি এই বিষয়ে ১৩(২) ধারায় প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন এবং সেটি প্রদানের যথাযথ নির্দেশ দেবেন ও তা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। প্রয়োজনে তিনি এই আদালতের সাহায্য নেবেন। আর সন্তানটি তার মায়ের কাছে বা মাতৃকুলের আত্মীয়ের কাছে থাকতে পারবে।

প্রসঙ্গত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, অন্য কোনও আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, ধর্ষণের কারণে কোনও সন্তান জন্মলাভ করলে- (ক) ওই সন্তানকে তার মা কিংবা তার মাতৃকূলীয় আত্মীয় স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাবে; (খ) ওই সন্তান তার মা বা বাবা কিংবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার অধিকারী হবে; (গ) ওই সন্তানের ভরণ-পোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে; (ঘ) ওই সন্তানের ভরণ-পোষণের ব্যয় তার বয়স ২১ বছর পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রদান করা হবে, তবে ২১ বছরের অধিক বয়স্ক কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে তার বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত এবং পঙ্গু সন্তানের ক্ষেত্রে তিনি স্বীয় ভরণ-পোষণের যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত প্রদেয় হবে। (২) সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপ-ধারা (১)-এ উল্লিখিত সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করবে।

একইসঙ্গে আইনের (৩) উপধারার অধীনে কোনও সন্তানকে ভরণ-পোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার ধর্ষকের কাছে থেকে আদায় করতে পারবে এবং ধর্ষকের বিদ্যমান সম্পদ হতে ওই অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হবেন সেই সম্পদ হতে তা আদায়যোগ্য হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com