রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন

হাসিনার হাতে শেখ মুজিবের দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছে-সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

হাসিনার হাতে শেখ মুজিবের দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছে-সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের প্রথম মৃত্যু হয়েছিল। তাঁকে হত্যা করেছিল সামরিক বাহিনীর একটি দল। কিন্তু শেখ মুজিবের দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছে তাঁরই কন্যার হাতে। অতি উচ্চ মর্যাদা দিতে গিয়েই শেখ মুজিবের এই মৃত্যু ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা। লেখক, সমাজচিন্তক, শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিজের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন। গত সোমবার (২৩ জুন) বাংলা একাডেমিতে ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের ভূমিকা’ বিষয়ে একক বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবকে সামরিক বাহিনীর একাংশ হত্যা করেছিল। সেটি ছিল তাঁর প্রথম মৃত্যু। তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছে তাঁর ভাবমূর্তির মৃত্যু। সেটা ঘটেছে তাঁর কন্যার হাতে। যে কন্যা তাঁকে অত্যন্ত আদর করে এবং অপ্রতিম উচ্চে তুলেছিল। ’বিকেলে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শুরুতে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। পর পর তিনটি সংগীত পরিবেশন করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ফুল দিয়ে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। ‘নতুন দিগন্ত পরিবার’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠান উপস্থাপন এবং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন অধ্যাপক আজফার হোসেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক পারভীন হাসান। বক্তৃতার পর আলোচনায় অংশ নেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, সাজ্জাদ শরিফ, আবু সাঈদ খান, রাজেকুজ্জামান রতন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখলাম, যে জাতীয়তাবাদী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, তার প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সাংবিধানিক উপদেষ্টা তাঁরা দুজন বন্দি হয়ে পাকিস্তানে চলে গেছেন। অন্যরা ভারতে চলে গেছেন। তো, আওয়ামী লীগ তো নেই! ঠিক জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে যেভাবে আওয়ামী লীগকে দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা অদৃশ্য হয়ে গেছেন। ঠিক সেভাবে তখন আওয়ামী লীগের নেতারা অদৃশ্য হয়ে গেছেন। এরপর সেখানে কত বিরোধ, কত কোন্দল, কত ষড়যন্ত্র। এই যে সেখানে নেতৃত্ব তাঁরা দিতে পারলেন না এটাই হচ্ছে বড় দুর্বলতা। এ জন্য এত ক্ষতি হলো। পাকিস্তানিরা যে অস্ত্র আনছে, এটা তো বারবার জানানো হয়েছে নেতাদের। ’ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী নেতাদের এই দেশত্যাগ ও আত্মসমর্পণ করাটা তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁরা দেশের মধ্যে থেকে যুদ্ধ করেননি। এটাই জাতীয়তাবাদের সীমা। উত্তেজিত করে অসহায় মানুষকে কামানের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ করেছে সাধারণ মানুষ। যুদ্ধের মাঠে নেতাদের দেখা যায়নি। রাজাকারদের তালিকা না করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেও সবচেয়ে বড় ভুল করেছে আওয়ামী লীগ। ’ দীর্ঘ বক্তৃতায় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভারতের অবস্থানের কয়েকটি রাজনৈতিক দিক ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের পূর্ববিরোধ এবং পাকিস্তানকে ভেঙে দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদের জাগরণের কারণে দুই বাংলা এক হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কাও ভারতের ছিল। তিনি বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য সবচেয়ে গৌরবের ঘটনা। একই সঙ্গে দুঃখজনক। অনেক মানুষ শহীদ হয়েছেন। আগেও সশস্ত্র যুদ্ধ হয়েছে এ জনপদে। কিন্তু স্বতন্ত্র জাতি প্রতিষ্ঠার চিন্তা তখন আসেনি। আমাদের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধের পর দ্বিতীয় দুর্ঘটনা হলো সাতচল্লিশের দেশভাগ। দেশভাগটা আমাদের জন্য একটা ট্র্যাজেডি। জিন্নাহ অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন, সন্দেহ নেই। তিনি বুঝেছিলেন, দুই পাকিস্তানের এক হাজার ২০০ মাইলের শুধু দূরত্ব নয়, এদের মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য আছে অনেক। এই জন্য তিনি পাকিস্তানি জাতি তৈরির কথা বলেন। কিন্তু পাকিস্তান জাতি গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই ভেঙে যায়। ’ ৯০তম জন্মদিনে এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা অনেক রকম বিপ্লব দেখেছি, যে বিপ্লব দেখিনি, সেটা হলো সামাজিক বিপ্লব। গণহত্যা চলছে নানাভাবে। গণহত্যা চলছে সরাসরি, গণহত্যা চলছে পরিবেশ ধ্বংস করে, গণহত্যা চলছে মাদক ও অস্ত্রের বিস্তার করে। এই গণহত্যা রুখে দিতে হবে ব্যক্তি মালিকানা রোধ করে। মালিকানা হবে সামাজিক। সময় এখন এগিয়ে গেছে, ব্যক্তি মালিকানা আর থাকতে পারে না। এর জন্য সংঘবদ্ধ চেষ্টা দরকার। ’ অনুষ্ঠানে ৯০তম জন্মদিনে অভিনন্দন জানিয়ে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক কবি সাজ্জাদ শরিফ বলেন, শুধু শ্রেণির ভেতর শিক্ষক থাকেননি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়েছেন। এখনো তাঁর বুদ্ধি সক্রিয়। ৯০তম জন্মদিনে ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের ভূমিকা’কে বক্তব্যের বিষয় করেছেন। রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই বারবার এ দেশে বিপ্লব আসে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com