নুরুল আমিন, চুনারুঘাট থেকে ॥ প্রতিবন্ধি আকছিরের বুক থেকে নেমে গেছে জাতীয় পতাকা। থেমে গেছে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ের অনেক শ্লোগান। তিনি অনেকটাই নিরব হয়ে গেছেন। কেবল ‘স্যার’ ডাকটাই উচ্চারিত হয় এখন ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে। চুনারুঘাটে সর্বজন পরিচিত একটি মুখ আকছির। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে দীর্ঘদিন বুকে ধারণ করেছেন একটি পতাকা, একটি দেশ, একটি বিশ্বাস। জাতীয় পতাকা বুকে এঁটে আকছির ছুটে চলেছেন যুগের পর যুগ। বাংলাদেশকে তিনি ধারন করেন অন্তরের মনিকোটায়। এক সময় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অনেক শ্লোগান আকছিরের বলিষ্ঠ কন্ঠে বাজতো। আকছিরের গায়ে কখনও শোভা পেতো খাকি পোষাক। কখনওবা পুলিশের উর্দি। সেই পোষাকের অগ্রভাগে ঝুলানো থাকতো নানান কিসিমের ব্যাজ। ব্যাজগুলো আকছির নিজেই সংগ্রহ করে আনতেন। কোনোটা স্টার, কোনোটা শাপলা প্রতীকের ব্যাজ শোভা পেতো তার উর্দির সোল্ডারে। আকছিরের মুখ থেকে হরহামেশা উচ্চারিত হতো ৭১ এর কালজয়ী নানা শ্লোগান। এ শ্লোগান হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে থাকা আকুতিরই অংশ বিশেষ। তার শ্লোগান লোক দেখানো ছিলোনা। ছিলোনা রাজনৈতিক কোন অভিব্যক্তি। তার শ্লোগান হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা ভালোবাসার জীবন্ত উদাহরণ হয়ে প্রকাশ পেতো। ৩৫/ ৪০ বছর ধরে আকছির নিজেকে খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে তোলে ধরেছেন সাধারণ থেকে অসাধারণের মাঝে। তাকে দেখে এখন কেউ থমকে দাঁড়ান না। কেউ তাকে কুশল বিনিময় করেন না। নিজে থেকে হাত উঁচিয়ে পথচারীদের সালাম দেন, কুশলাদি বিনিময় করেন। উর্দিপড়া লোকদের তিনি গার্ড অব অনার এর মতো করে সম্মানসুচক স্যালুট প্রদান করেন না তবে হাত উঁচিয়ে সালাম কালাম দেন। মুখ থেকে উচ্চারিত হয় সেই স্যার নামক আদবের শব্দটি। আকছিরে হাত-পা, কন্ঠ স্বাভাবিক নয় কিন্তু তার মাঝে রয়েছে অকৃত্তিম দেশপ্রেম। স্বাধীনতার সেই শ্লোগান আকড়ে রয়েছেন আকছির যুগ থেকে যুগ অবদি। সংসার আছে, ঘর আছে তার। তারপরও আকছিরের কাছে দেশ এবং জাতীয় পতাকা অমুল্য এক রতন। আকছির মিয়ার বাবার নাম সিরাজ মিয়া। বাড়ি চাঁনভাঙ্গা গ্রামে। সরকারের পক্ষ থেকে টিনশেডের একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে তাকে। স্ত্রী নূর নাহার ও একমাত্র কন্যা কুলসুমাকে নিয়েই তার সংসার। আকছির মিয়া বলেন, তিনি এখন আর উর্দি পড়েন না, শ্লোগান দেন না তবে পতাকাকে ঘরের তীরে ঝুলিয়ে রেখেছেন যত্নের সাথে।
Leave a Reply