স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। শীতের শুরু থেকেই পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে শীত যত বাড়ে পর্যটক তত বেশি আসে।
জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এ উদ্যান। উদ্যানের কাছাকাছি রয়েছে নয়টি চা বাগান। এর পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত। পর্যটকদের প্রবেশের মূল্য ধরা হয়েছে জনপ্রতি ১১৫ টাকা। তবে এটিকে উচ্চ মূল্যবলে জানান এখানে আসা পর্যটকরা।
উদ্যানের অভ্যন্তরে ত্রিপুরা পাড়ায় একটি পাহাড়ি উপজাতির ২৪টি পরিবার বাস করে। মূলত সাতটি ছড়া থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান।
এখানে রয়েছে প্রায় ২০০ এর বেশি জাতের গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদির বিশেষ নাম করা যায়। বনের ভেতরে রয়েছে এক ঘণ্টার ও ২ ঘণ্টার হাইকিং। গাইডকে সঙ্গে নিয়ে পর্যটকরা গভীর বনাঞ্চলে চলে যেতে পারে তবে একা যাওয়ার নিরাপদ নয়।
এ উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ছয় প্রজাতির উভচর। আরও আছে প্রায় ১৫০-২০০ প্রজাতির পাখি।
এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। বনে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি। সরীসৃপের মধ্যে সাপ, পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠ ঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলুদ পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে পর্যটকরা মায়া হরিণ সহজেই দেখতে পারেন। এখানে পর্যটকদের কোলাহল বেশি থাকার কারণে মায়া হরিণ সহজেই দেখা মিলে না।
পর্যটকরা দেশের যেকোনো স্থান থেকে গাড়ি কিংবা রেলপথে শায়েস্তাগঞ্জে নেমে যেকোনো ধরনের যানবাহন দিয়ে চুনারুঘাট উপজেলা হয়ে সহজেই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যেতে পারেন। শুধুমাত্র যারা প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চান তারাই সেখানে আসেন।
বিশেষ করে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পর্যটক এখানে বনভোজন করতে আসেন। অনেকেই সাতছড়ির ভিতরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খাবার রান্না করে খেতে পারেন। আর যারা পরিবার পরিজন নিয়ে এসে তাদের জন্য কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। পর্যটকরা চাইলে সেখানে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে খাবার অর্ডার দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।
সাতছড়ি বনবিটের রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে শীতের মৌসুমে এখানে পর্যটকদের বেশি বিচরণ থাকে। এখানে আবাসিক সুযোগ সুবিধা না থাকলেও যাতায়াত ও খাবার দাবারের সুযোগ সুবিধা বেশি রয়েছে। এছাড়া প্রকৃতিকে উপভোগ করতে হলে সাতছড়িতে আসতে হবে। তিনি দেশের বিভিন্নস্থানের পর্যটকদের এখানে ঘুরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
Leave a Reply