সিলেট প্রতিনিধি ॥ সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে ৭০৬তম ওরস মোবারক শুরু হচ্ছে আজ রোববার। দুই দিনব্যাপী ওরসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মাজারে গিলাফ চড়ানো, জিকির আজকার, খতমে কোরআন, আখেরি মোনাজাত ও শিরনি বিতরণ। প্রতি বছর হিজরি জিলকদ মাসের ১৯ ও ২০ তারিখ ওরস অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক ভক্ত অংশ নেন। এবার শান্তিপূর্ণভাবে ওরস সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও মাজার কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। অনুষ্ঠান হবে ‘অশ্লীলতামুক্ত’। থাকবে না গান-বাজনার আসর। শুক্রবার মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. রেজাউল করিম জানান, ভক্তদের নিরাপত্তার স্বার্থে মাজার প্রাঙ্গণে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশ, র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাদাপোশাকে মাজার প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালন করবেন। মাজারের পবিত্রতা রক্ষায় সেখানে যাতে কেউ সিজদা না দেন, শিরক-বেদাতমূলক কাজে জড়িত না হন, এ লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার সাঁটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাজার কর্তৃপক্ষ জানায়, গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হয়েছে ওরসের পশু জবাই। রোববার সকাল ৯টার পর গিলাফ চড়ানো হবে। এদিন এশার নামাজের পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ৩০ জন হাফেজ কোরআন খতম করবেন। পরে সাড়ে ৩টায় আখেরি মোনাজাত হবে। সোমবার সকালে শিরনি বিতরণ, বাদ জোহর মিলাদ মাহফিল, বাদ আসর শরবত বিতরণ এবং রাত ১০টার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ওরসের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। ওরস উপলক্ষে এরই মধ্যে ২৫ এপ্রিল মাজারের ঐতিহ্যবাহী ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব হয়েছে। বহু বছর ধরে চলে আসা নিয়ম অনুযায়ী এই উৎসবে সংগৃহীত কাঠ দিয়ে ওরসে রান্না করা হবে। এ জন্য নানা সাজে সেজে ভক্তরা জুমার নামাজের পর পদ যাত্রাসহকারে মাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে লাক্কাতুরা চা-বাগানের টিলায় যান। সেখান থেকে তাঁরা জ্বালানি সংগ্রহ করে আবার দরগাহে ফেরেন। প্রতিবছর ভক্তদের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে উৎসবে অংশ নিতে দেখা গেলেও এবার তা বাদ দেওয়া হয়। মাজারের খাদেম জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আশা করছি, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ওরস শেষ করতে পারব। আমরা কোনোবারই অশ্লীলতাকে সমর্থন করি না। সিজদার বিষয়েও আমাদের কড়া নির্দেশনা আছে। অনেকে না জেনে এসব করে ফেলে। মাজারে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে।’ হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর জন্ম ১২৭১ খ্রিষ্টাব্দে, ইয়েমেনের কুনিয়া বা কানিয়া নামক স্থানে। তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটে আসেন। তিনি ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জিলকদ ইন্তেকাল করেন। সিলেটে তিনি যে টিলায় বসবাস করতেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর কবর ঘিরেই পরে গড়ে ওঠে মাজার।
Leave a Reply