স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসেবে বিবেচিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) পর্যায়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে কিছু রদবদল করা হতে পারে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় এ পদে ব্যাপক রদবদল হবে। এ লক্ষ্যে এখন যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই (ফিট লিস্ট) করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ২১ জন ডিসিকে প্রত্যাহার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাইয়ের কাজটি শেষ হলেই তাঁদের পরিবর্তন করা হতে পারে। বাছাইয়ের কাজটি শেষ হতে পারে এই মাসের মধ্যে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন রয়েছে, তাই মাঠ প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘যোগ্য’ কর্মকর্তাদের পদে আনার চেষ্টা চলছে। এবার নতুন করে ২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। বাছাই তালিকা তৈরির জন্য ২১ জুন ২৮তম ব্যাচের বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২৪তম, ২৫তম এবং ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ২৪ ও ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের (২০০১-০৬) আমলে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। একএগারোর পটপরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৭-০৮) আমলে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। সরকারি ভাষ্য বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বদলির সময় ও প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে আলোচনা আছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে, এমনটি ধরে নিয়েই এ প্রস্তুতির কাজ চলছে। বিগত সরকারও নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অনেক জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন এনেছিল। অবশ্য গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বরর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের ডিসিদের প্রত্যাহার করে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। তবে এ নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তারা হাতাহাতি, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন ৯ জন ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়েছিল। রদবদল করা হয়েছিল চার জেলার ডিসিকে। যেসব জেলায় পরিবর্তন হতে পারে ঃ
২১ জেলায় বর্তমানে যাঁরা ডিসির দায়িত্বে আছেন, তাঁরা গত মার্চে উপসচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তবে ডিসির পদটি উপসচিব পদমর্যাদার। ফলে এই জেলাগুলোতে বদলির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এই জেলাগুলো হলো হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট। এসব জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিসি পদে এই ব্যাচের ২৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও পরিবর্তন আসতে পারে। এ ছাড়া আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শরীয়তপুরের ডিসিকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। ফলে এই জেলায় নিয়মিত ডিসি নেই। স্বাভাবিকভাবে এই জেলাতেও পরিবর্তন আসবে। জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক পর্যায়ে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। যখন যে জেলায় প্রয়োজন হবে সেখানে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। সামনে হয়তো ৪-৫ জন ডিসি বদল হতে পারে। এর মধ্যে শরীয়তপুরে অবিলম্বে একজন ডিসি নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া বাছাই তালিকা হয়ে গেলে যাঁরা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁদের জায়গায় নতুন ডিসি দেওয়া হবে। জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যাতে বিতর্কের সুযোগ না থাকে সে জন্য খুব নিবিড়ভাবে বাছাই করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পেশাদার ও সর্বোচ্চ যোগ্য লোককে বাছাই করা হচ্ছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করাও একটি কঠিন কাজ। এ জন্য একটু সময় লাগছে। তবে জুলাইয়ের মধ্যেই বাছাই কাজ শেষ করা হবে।
Leave a Reply