নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ॥ প্রতিহিংসা মানুষকে ধ্বংস করে। প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে অন্যের প্রতিদানকে অবজ্ঞা করলে পরিণতি শুভ হয় না। এখানে একটি সচিত্র প্রতিহিংসার চিত্র তুলে ধরা হলো। পুরাতন সিলেট-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক। মহাসড়ক হওয়ার পর যা এখন আন্তঃজেলা সড়ক নামে পরিচিত। শায়েস্থাগঞ্জ থেকে মাধবপুরের জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর। চুনারুঘাট উপজেলা পেরিয়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই চায়ের রাজ্যে প্রবেশ। প্রথমেই ডানকান ব্রাদার্সের চানপুর চা বাগান। ডানকান কোম্পানীর অনেকগুলো চা বাগান এই পথে। চানপুর চা বাগানের ৩টি ফাঁড়ি বাগান, চাকলাপুঞ্জি, এনটিসির চন্ডিছড়া পেরিয়ে তেলিয়াপাড়া পর্যন্ত চা বাগানের ভেতর দিয়েই অতিক্রম করতে হয়। চানপুর চা বাগানের ফাঁড়ি বাগানের মধ্যে রামগঙ্গা একটি। আন্তঃজেলা সড়কের পাশেই এর অবস্থান। কিন্তুু চা শ্রমিকসহ এই বাগানের কর্মরতদের ওই সড়কে আসার প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে একটি ছড়া। খরস্রোতা এই ছড়া বর্ষা মৌসুমে বেপরোয়া হয়ে উঠে। শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলেও ছড়ার কূল বেয়ে উঠা-নামা ওখানকার বাসিন্দাদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠে। কোন মুমুর্ষূ রোগী বা সন্তান প্রসবা কোন মাকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়াও যায় না। এখানে বাগান কর্তৃপক্ষ কোন ব্রীজ বা কালভার্ট করে দেয়নি। এই বাগানের বাসিন্দাদের দূর্ভোগের কথা চিন্তা প্রায় ১০/১১ বছর আগে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন নিজস্ব উদ্যোগে একটি কাঠের ব্রীজ তৈরী করে দেন। খরস্রোতা এই ছড়ায় ব্রীজটি বেশী দিন ঠিকেনি। পরে বাগানবাসীর সুবিধার্থে পায়ে চলা বা সাইকেল মোটর সাইকেল দিয়ে এই ছড়া পারাপারের জন্য একটি পাকা ব্রীজ করে দেন। সেই সময় পর্যন্ত ব্যারিস্টার সুমন নির্বাচন করবেন এমন ভাবনাই কারো মনে আসেনি। তিনি নিজেও নির্বাচনী ভাবনা থেকে নয়, চুনারুঘাট এবং মাধবপুর উপজেলায় ছোটখাটো অনেক ব্রীজ এবং ভাঙ্গা সড়ক মেরামত করে দিয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়নে এসব সেবামূলক অনেক কাজই করেছেন। এলাকার অনেকেই কিছুটা হলেও স্বস্থি পেয়েছেন। হবিগঞ্জ-৪ আসনের ৩ টার্মের সাবেক সংসদ সদস্য ও পরে পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী সরকারের রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক কাজই করেননি। শুধু প্রতিহিংসায় বশীভূত হয়ে রামগঙ্গা ছড়ার উপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দূর্যোগ ও ব্যাবস্থাপনার অধিদপ্তরের প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে এই ব্রীজটি নির্মাণ করা কি খুবই প্রয়োজন ছিল? এ প্রশ্ন জনমনে। বিমান প্রতিমন্ত্রী তার পিএস বেলাল ও তার বাবা রহম আলী এবং তার সহধর্মিনীর উন্নয়নে ছিলেন মগ্ন। তিনি ভাবলেন, ব্যারিস্টার সুমন যখন এখানে ব্রীজ করে দিয়েছে, তাহলে তিনিও একই স্থানে আরো বড় একটি ব্রীজ করে দেবেন। প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে জনগণের বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে আরেকটি ব্রীজ করলেন। অবশ্য এই ব্রীজটি তিনি তার বাবার টাকা বা নিজের অর্জিত টাকায় করেননি। করেছেন জনগণের ট্যাক্সের টাকায়ই। অথচ চাকলাপুঞ্জি সহ বিভিন্ন চা বাগানে ব্রীজের জন্য শ্রমিক কর্মচারী সহ স্টাফদের বহু অনুরোধের পরেও কোন ব্রীজ করেননি। এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক, ব্রীজ রয়েছে যেখানে জনসাধারণ নানা রকম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, সেখানে ব্যারিস্টার সুমনের ব্রীজের পাশে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে আরেকটি ব্রীজ করার কি প্রয়োজন ছিল? প্রয়োজন ছিল শুধু প্রতিহিংসা আর অন্যকে কিভাবে জনগণের কাছে ছোট রাখা যায়।
উল্লেখ্য, এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি ও তার স্ত্রী টাকা কামানোর নেশায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন। মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর সায়হাম গ্রুপের গড়ে তোলা সৈয়দ সঈদ উদ্দীন ডিগ্রী কলেজের নাম পরিবর্তন করে তার বাবার নামে করে নিয়ে ছিলেন। অথচ সায়হাম গ্রুপ এই কলেজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে উচ্চ শিক্ষার পথকে সুগম করে দিয়েছে। মাহবুব আলীর পিতা মাওলানা আছাদ আলী ওই কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে একজন খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। কলেজ থেকে বেতনভাতাও ভোগ করেছেন। মাওলানা আছাদ আলী আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছিলেন না। তিনি নেজামে ইসলাম করতেন। ১৯৭০ সালে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মাধবপুর থানায় আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী না পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হবিগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোস্তফা আলী সাহেব মাওলানাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিলে তিনি এমপিএ নির্বাচিত হন। সেই সময় থেকেই মাহবুব আলীরা আওয়ামী ঘরনার হয়ে যান। ওদের দলের প্রতি কোন দরদ বা জনগণের প্রতি তাদের কোন দায়বোধ আছে বলে বিগত দিনে তা জনগণ প্রত্যক্ষ করেনি। এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী ৩ টার্মের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে তা প্রমান করে গেছেন। একটি প্রবাদ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ‘ভিক্ষার চাল দিয়ে ভিক্ষা দেয়া যায় না’ তেমনি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েও নিজ এলাকা সহ তার নির্বাচনী এলাকার কোন উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। সময় এসেছে তিনি সহ তার স্ত্রী এবং এপিএস বেলাল ও তার বাবা রহম আলীর সম্পদ এবং ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখে থলের বিড়াল জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবী।
Leave a Reply