নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ নবীগঞ্জ উপজেলা শহরের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হাঁসফাঁস করছেন তারা। স্থানীয়রা বলছেন, গোটা শহর যেন পরিণত হয়েছে অটোরিকশা, রিকশা ও মিশুকের নগরীতে। নবীগঞ্জ শহরের অধিকাংশ ফুটপাত চলে গেছে ভ্রাম্যমাণ ও কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীদের দখলে। কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর বাস টার্মিনাল এবং কাঁচাবাজারের জন্য করা বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি কোনো কাজেই আসছে না। অভিযোগ রয়েছে, যানজট নিরসনে বিভিন্ন সময় আশ্বাসের কথা শোনালেও, মাঠ পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ খুবই উদাসীন। পৌর কর্তৃপক্ষ শহরে চলাচলের জন্য প্রায় ৮০০ রিকশা ও মিশুকের অনুমতি (নম্বরপ্লেট) দিয়েছে। অথচ শহরে চলাচল করছে হাজারো মিশুক ও অটোরিকশা। পরিকল্পিতভাবে নেয়া এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। নবীগঞ্জ শহরের ভেতরের মূল সড়কের যেখানে সেখানে বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ট্রাক দাঁড় করিয়ে যাত্রী ও মালপত্র লোড-আনলোড করা হচ্ছে। এতে যানজট পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। নির্ধারিত কাঁচামালের দোকানের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রোথ সেন্টার নির্মাণ করে ব্যবস্থা নিলেও তারা সড়কের ওপর ব্যবসা করছেন। নবীগঞ্জ শহরের পানি নিষ্কাশন, যানজট ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাত নির্মাণে কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ করা হলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এর মধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় করা হয়েছে ড্রেনেজ কাজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে নয়ছয় কাজ করে দায়সারা হয়েছে এসব প্রকল্প। কয়েক মাসের মধ্যেই ড্রেনের ওপরের স্ল্যাভ ভেঙে গিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শহরের বাসিন্দারা জানান, নতুন বাজার আব্দুল মতিন চৌধুরী স্কয়ার, ওসমানী সড়ক, মধ্যবাজার, জে কে স্কুল রোডের ওপর কাঁচামালের হাট বসানো হয় নিয়মিত। ফলে ওই সড়কে রিকশা নিয়েও চলাচল করা যায় না। নতুন বাজার এলাকায় ওয়ান বাই রোড থাকলেও কোনো যানবাহনের চালক তা মেনে চলেন না। পৌর শহরের পুরোনো গরুর বাজারে কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের জন্য গ্রোথ সেন্টার নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর কিছুদিন কাঁচামালের ব্যবসায়ীরা গ্রোথ সেন্টারে হাট বসান। নবীগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জগামী বাস শহরের নতুন বাজার গাজীরটেক (আব্দুল মতিন) স্কয়ার ট্রাফিক পয়েন্টে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করার ফলে সারাক্ষণ লেগে থাকে যানজট। শহরের নতুন বাজার এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে কাঁচামালের বাজার। পৌর শহরের ছালামতপুর পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ হলেও ওই বাসস্ট্যান্ডের কোনো কাজেই আসছে না। সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মালিক জানান, শহরের যানজট সমস্যার সমাধান করতে উচ্ছেদ নয়, একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা দরকার। যানজটে আটকে পড়া আজিজ চৌধুরী নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক জানান, নেতারা ভোট হারানোর ভয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত, যানজট নিরসন ও অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে চান না। শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, থানা পয়েন্ট, ওসমানী রোড (উত্তরা ব্যাংকের সামনে), হাসপাতাল সড়কের খালিক মঞ্জিলের সামনের সড়ক, হাসপাতাল গেট, শেরপুর রোডের রাজা কমপ্লেক্সের সামনে, শেরপুর রোডের বাংলা টাউনের ইসলামী ব্যাংকের সামনে, রুদ্রগ্রাম রোডের সোনার খনি ব্রিজ পর্যন্ত এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কের ওপর রাখা থাকে ছোট-বড় যানবাহন। এতে পথচারীদের চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি বাইপাস সড়কের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শেফু। তিনি জানান, হবিগঞ্জ সদর, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের লোকজন বিভাগীয় শহর সিলেট যেতে ওই সড়ক ব্যবহার করলে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা কমে যায়। এতে সময় ও খরচ বাঁচে। এ অবস্থায় হবিগঞ্জ সড়ক থেকে ছালামতপুর পর্যন্ত একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে জানান মুজিবুর রহমান। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, প্রায় বছরখানেক আগে এখানে বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কয়েক মাস আগে সেটি একনেকে পাশও হয়। এরপর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। নবীগঞ্জ পৌরসভার সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী জানান, নবীগঞ্জ শহরের যানজট স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। ইউএনও অনুপম দাস অনুপ জানান, যানজট নিরসনের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।
Leave a Reply