নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ আজমিরীগঞ্জের জলসুখায় গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রকরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নারী পুরুষ সহ অন্ততপক্ষে অর্ধ-শতাধিক আহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭ টায় ওই এলাকার শঙ্খমহল গ্রাম এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর অবস্থায় উভয়পক্ষের ৬ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি উসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় ও পুুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজমিরীগঞ্জের জলসুখার আ,লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি জহুর হোসেন ও জলসুখা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সলিম উল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রাম্য বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরে মাস খানেক পুর্বেও তাদের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যদিও বিষয়টি স্থানীয় সালিশ-বিচারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে আক্রোশ থেকে যায়। এদিকে আ’লীগের জলসুখা ইউনিয়নের সহ সভাপতি জহুর হোসেনের গোষ্ঠী ও সাবেক আ, লীগ ও বর্তমানে জামায়াত নেতা ডা. রেজাউল করিম ও আ’লীগ নেতা আলাউদ্দিন মেম্বার অর্থাৎ তিন গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে, গত সোমবার জলসুখা ইউনিয়নের ৬নং ওযার্ড আ’লীগের সভাপতি মিনু মেম্বার সহ রেজাউলের দলবল নিয়ে রাত ৭ টায় ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমেদ খেলু’র গোষ্ঠীর কিছু লোকজনকে ধাওয়া করে। একই সময় তারা নিরীহ শহীদ মিয়ার পুত্র মামুন মিয়া সহ এক নারীকে মারধোর ও শ্লীলতাহানি করে। এরই জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারী পুরুষ সহ অন্ততপক্ষে অর্ধ-শতাধিক আহত হয়। আহতদের মধ্যে সাইকুল বেগম (৫০),জিয়াউর রহমান(৩৫), তকদির মিয়া (৪২), ইমন (২২),নাইম মিয়া (২৪),শামিম মিয়া(১৯) মছদ উল্লা (৬০),জয় (২০) মুকসুদ উল্লা (৫০),আলী নুর (১৪) ফয়সল (১৪) অনু মিয়া (৪০) কে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে জলসুখা ইউনিয়ন আ’লীগের সিনিয়র সহ, সভাপতি জহুর হোসেনের নেতৃত্বে, ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মোঃ সলিমুল্লা, মোঃ করিম মিয়া, মোঃ লিবাছ মিয়া, মোঃ ফাহিম খাঁন ও মন্নাফ মেম্বারের বাড়িঘর সহ প্রায় ১০-১৫ টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলা ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। মধ্যপাড়ার মোঃ করিম মিয়া জানান, আমি নিজ কর্মস্থল বানিয়াচংয়ে থাকি। আমরা নিরীহ মানুষ। কোন ধরণের ঝগড়াবিবাদ পছন্দ নয়। বাড়ীতে শিশু ও মহিলারা বসবাস করে। খবর পেয়ে বাড়ীতে এসে দেখি, মহিলাদের মারধোর করা হয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েছি। বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে হামলাকারীরা ভিতরে প্রবেশ করেছে। তারা কাঁচের বোতলে পেট্রোল ভর্তি করে এতে অগ্নিসংযোগ করে, প্রতিটি ঘরই জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। মোঃ ফাহিম খাঁন জানান, আমরা আমাদের কাজ নিয়ে অন্যত্র থাকি। ঝগড়াঝাঁটি করার সময় নাই। কেউ গালিগালাজ করলেও প্রতিবাদ না করে, চোখ বুঝে না শুনার ভান করে চলে আসি। অথচ আমাদের বাড়িঘরে মামলা ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। হামলা ভাংচুরের শিকার হয়ে অনেককেই বিলাপ করতে দেখা গেছে। এদিকে খবর পেয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ফের সংঘর্ষ এড়াতে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। তবে স্থানীয়রা জানান, আবারও যে কোন মূহুর্তে সংঘর্ষ ঘটার শঙ্কা রয়েছে।
Leave a Reply