লাখাই প্রতিনিধি ॥ লাখাই উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টি ও খরায় খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে বোরো মৌসুমে কৃষি জমিতে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। দেখা গেছে, উপজেলার হাওর এবং মাঠের পর মাঠ বোরো জমি ফেটে চৌচির। ফলে ধান বিবর্ণ রঙ ধারণ করে শুকিয়ে যাচ্ছে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বৃষ্টি হলে এ সমস্যা কেটে যাবে। জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার চাষিরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়ে ফসলের মাঠ সবুজের সমারোহে ভরে ওঠায় তারা আশায় বুক বেঁধেছেন। কিন্তু হঠাৎ তাদের হাসিমুখে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। টানা খরা ও অনাবৃষ্টিতে হাওরে ও মাঠে রোপিত বোরো ধানের জমি শুকিয়ে গেছে। চাষিরা সেচের পানি দিতে পারছেন না। অনেক জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, বর্তমানে দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া ধানের বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের জন্য উপযোগী। এর মধ্যে যদি জমিতে পানি না থাকে তাহলে সেটা আরও বড় সমস্যা। বিস্তীর্ণ হাওরবেষ্টিত লাখাই উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবারই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাদের আবার বৃহৎ একটি অংশ ভূমিহীন প্রান্তিক বর্গাচাষি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ২০৮ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন ধান। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন ধান। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে ভালো ফলন আশা করা যায়। এ বছর উপজেলায় ব্রি ধান ২৮, ২৯, ৮৮, ৮৯, ৯২, ১২০ ও ১০৪, বিনা ধান ২৫ হাইব্রিড জাতের মধ্যে হীরা ০১, ০২, ০৬, ১৯, ব্র্যাক ০৩, শক্তি ০১, সুরভি ০১, এসএলএইচ ০৮, উইন ৩০২, জনকরাজা, পাইওনিয়ার ইত্যাদি জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল হাসান মিজান বলেন, এ বছর হাওর এলাকায় চাষাবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৩৩২ হেক্টর জমি এবং হাওরবিহীন জমিতে ২ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও সেচের অভাব দেখা দিয়েছে উপজেলার বিভিন্ন হাওরে। সেচের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে উপজেলার হাওরাঞ্চলের কয়েকশ একর জমি। সেচের অভাবের জন্য কৃষকরা স্কিম ম্যানেজারদের দায়ী করছেন। এদিকে স্কিম ম্যানেজাররা বলছেন, ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় এবং জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। লাখাই উপজেলার স্বজন গ্রামের কৃষক হবু মিয়া বলেন, পানির খুবই অভাব। আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। একই গ্রামের কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, হাওরে সেচের পানির অভাবে আমাদের জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতেরও সমস্যা আছে। ফলে ঠিকমতো সেচ পাওয়া যায় না। নদী-নালা, খাল-বিলও শুকিয়ে গেছে। তাই একেবারেই পানি পাওয়া যাচ্ছে না। লাখাই উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমিত ভট্টাচার্য্য বলেন, বোরো ধানের ফ্লাওয়ারিং পর্যায়ে জমিতে পানি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্লাস্ট ও বাদামি গাছ ফড়িং সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠে পর্যায়ে লিফলেট বিতরণসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। জনপ্রতিনিধি ও স্কিম ম্যানাজারদের সাথেও আলাপ করেছি। ধানের চিটা রোধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
Leave a Reply