নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকায় দীর্ঘ ১৫ বছর পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দখলমুক্ত হল একাধিক সরকারি জলাশয়। ” সরকারি সম্পত্তি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ” লিখা সম্বলিত সাইনবোর্ড টানিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এতে করে ওই জলাশয় দখল-পুনর্দখল নিয়ে অনাখাঙ্খিত সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেল এলাকার লোকজন। জানা যায়, ভাটি এলাকার এক সময়ের নদী হিসেবে খ্যাত আজমিরীগঞ্জ সদর উপজেলা ও পৌর সদর। উক্ত এলাকায় টানবাজার ও লামাবাজার নামে দু’টি বাজার দৃশ্যমান ছিল। এরমধ্যে সারা বছরই টানবাজারের ব্যবসায়ীক বেচাকেনা ও লেনদেন পরিচালিত হতো। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে লামাবাজার পানিতে তলিয়ে যেতো, শুধু শুকনো মৌসুমে বেশকিছু দোকানপাট অর্থাৎ শাকসবজি, মাছ,বাঁশ, ফলমূল, পানসুপারি ও মুদীদোকান সহ বিভিন্ন ধরণের দোকান লামাবাজারে স্থানান্তরিত করে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তার সময়সীমা ছিল ছয়মাস। পুনঃরায় বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই দোকানপাট নিয়ে টানবাজারে চলে আসতো। এভাবেই চলতো আজমিরীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম। সময়ের বিবর্তনে বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পলিমাটি মিশ্রিত পানিতে একসময় ভরাট হয়ে যায় লামাবাজার সহ এলাকার নীচু স্থান সমূহ। ১৯৯১ সালে বানিয়াচং – আজমিরীগঞ্জ সংসদীয় আসনে নির্বাচিত শরীফউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর উক্ত আসনে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ওই সময়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উদ্যোগে আজমিরীগঞ্জ – কাকাইলছেও রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। উক্ত রাস্তা নির্মাণে মাটি ভরাট করা হলে, সংলগ্ন স্থান সমূহে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে টানবাজারের মাছবাজারের নীচে বিগত সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে অন্যান্য কাজের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয় মাল্টিপারপাস সেড। পরবর্তীতে লোকজনের সহজ যাতায়াতের জন্য মাল্টিপারপাস সেড থেকে চরবাজার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হলে, এর দু’পাশে দু’টি জলাশয় বা পুকুরের সৃষ্টি হয়। ওই সময়ের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের শাখা সংগঠন যুবলীগের দখলে চলে যায় প্রায় ১০ একর পরিমাণের দু’টি জলাশয় বা পুকুর। এ ছাড়া অপরপাশে চরবাজার থেকে বিশ্ব গোডাউন পর্যন্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা হলে সৃষ্টি হয় আরও দু’টি বড় জলাশয়ের। একই ভাবে ক্ষমতাসীন দলের অনুগত লোকজন দখলে নিয়ে বিগত ১৫ বছর যাবৎ মাছ চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। সম্প্রতি বিগত ৫ আগষ্ট ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। পরিবর্তনের হাওয়া বইতে থাকে সর্বত্র। এরই ধারাবাহিকতায়, সরকারের মালিকাধীন জলাশয় সমূহ সহ খাস জায়গাগুলোর দখল পুনর্দখল নিয়ে অনাখাঙ্খিত সংঘর্ষের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের উদ্যোগে সরকারের মালিকাধীন একাধিক জলাশয় বা পুকুর দীর্ঘ ১৫ বছর পর দখলমুক্ত হয়েছে।
Leave a Reply