স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুনারুঘাট উপজেলার ছয়শ্রী বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতি উত্তর ছয়শ্রী উদ্যোগে শ্রী শ্রী রাসলীলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ৭৭তম অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৃত্যের তালে তালে আর সুগন্ধী ফুলের সুবাসে মৌ মৌ পরিবেশে সব ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। মনিপুরী সম্প্রদায়ের বিশেষ এই রাস মেলা – রাসনৃত্য ৭৭ তম উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে সিলেট মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. জহিরুল হক শাকিল উপস্থিত ছিলেন। একদিকে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ছাড়াও বিনোদনের অনন্য এক সমাবেশে পরিণত হয়। সব বয়সী মানুষের এক অনবদ্য এই ধর্মীয় দিক দিয়েই প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।
রাস মেলা বা রাস নৃত্য এ উপমহাদেশে কিভাবে এলো, কারা এর প্রবর্তক তা অনেকেরই অজানা। যা নিম্মে আংশিক তুলে ধরা হলো।
মনিপুরী সম্প্রদায় ১৭৫৯ খৃষ্টাব্দে মনিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র অগ্রাহয়ন মাসের শুক্লা পূর্ণিমাতে মহারাস প্রথম বারের মত লীলা উৎসব প্রবর্তন করেন। এর পর থেকে অগ্রাহয়ন পূর্ণিমা তিথিতে গৌরীয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মনিপুরী সম্প্রদায় প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব শ্রীকৃষ্ণের মহারাস লীলা পালিত হয়ে আসছে।
অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বসবাসরত মনিপুরী সম্প্রদায় প্রায় দেড়’শ বছর পূর্বে এদেশে তাদের ধর্ম সংস্কৃতির প্রধান উৎসব রাস লীলার সূচনা করেন। রাস উৎসবে দুটি পর্ব। দিনের রাখাল রাস আর রাতে মহারাস। দুভাগে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে।
১৯২৬ সালে কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর সিলেটের মাছিমপুরে এসে মনিপুরী মেয়েদের রাস নৃত্য দেখে মুগ্ধ হন। পরে তিনি রাস নৃত্য নিয়ে নৃত্য নাট্যে সহ নানা রকম গবেষণাও করেন।
রাস মেলা বা রাস নৃত্য সম্পর্কে জানা যায়, রাস শব্দের অর্থ কি? এর অর্থ হলো নট যখন বহু নটীর সাথে নৃত্য করেন তখন সেই যৌথ নৃত্যকে ‘রাস নৃত্য’ বলা হয়। শারদ পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান শ্রী কৃষ্ন নানা রকম পুষ্প বিশেষত সুগন্ধযুক্ত মল্লিকা পুষ্প দ্বারা সজ্জিত হয়েছেন।
অপর দিকে নিস্কাম যোগিনীগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে প্রাপ্তি করার জন্য কাত্যায়ানী দেবীর ব্রত করেছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন রাস অনুষ্ঠান করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৮ বছর। জড়জগতের যে যুবক-যুবতীরা নৃত্য করে তাঁর সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য লীলার আকাশ পাতাল তফাৎ। আধ্যাতিকতায় পূর্ণ ও অপর দিকে জড়জগতের যে যুবক-যুবতীরা সেই নৃত্য জড়তায় পূর্ণ। ভগবানের মায়াশক্তি মহামায়ার প্রভাবে জড়জগতের যুবক-যুবতীরা স্বেচ্ছাচারিতায় নিমগ্ন হয়ে অবশেষে মহাদুঃখে পতিত হয়। তাই শাস্ত্রের মতে রাস লীলার অনসরণ করে এমনকি জাগ্রত করা উচিত নয়। শাস্ত্রে যোগিনীদের কৃষ্ণপ্রেমকে নিঃশ্বাস ও বাসনা বিহীন বলা হয়েছে। শারদ পূর্ণিমা তিথিতে তাঁরা ভগবানের বংশীধ্বনি শ্রবণ করে ছুটে এসেছিলেন। সেই সময় থেকে বহুগুন যোগমায়ায় দেবীকে আচ্ছন্ন করে।
শ্রীমদ্ভাভগবর্তে, এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ‘ভগবানপি তা রাত্রিঃ শারদোৎ ফুল্ল মল্লিকাঃ, বীক্ষ রন্তং মনশ্চাক্রে যোগ মায়ামুপাশ্রিত’।
Leave a Reply