স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচং উপজেলায় মৎস্য ঘেরে ফাঁদ পেতে একটি বিপন্ন মেছো বিড়াল ধরা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) উপজেলা সদরের প্রথম রেখ মহল্লার মৎস্য খামারি লিলু মিয়া তার ঘের থেকে বিড়ালটি ধরে বাড়িতে নিয়ে খাঁচায় বন্দি করে রাখেন। স্থানীয় লোকজন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রেঞ্জ কার্যালয়ে এ ঘটনার খবর দিয়েছেন। এলাকাবাসী জানান, লিলু মিয়া শুক্রবার রাতে তার মৎস্য ঘেরে ফাঁদ পেতে একটি মেছো বিড়াল ধরেন। পরে বাড়িতে এনে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রেখেছেন। বিড়ালটি দেখতে উৎসুক লোকজন তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। বিড়ালটি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। বিপন্ন এই বণ্যপ্রাণীটি উদ্ধার করে নেওয়ার জন্য বন বিভাগে খবর দেওয়া হয়েছে কিন্তু তারা এটি উদ্ধার করার জন্য এখনো আসেনি।রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বানিয়াচংয়ে মেছো বিড়াল ধরা পড়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মেছো বিড়ালটি জেলা সদরে নিয়ে এলে উপযুক্ত আবাসস্থল পাওয়া যাবে না। তার চেয়ে সেখানেই অবমুক্ত করা উচিত। সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনধির মাধ্যমে এ কাজটি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, অগ্রহায়ণ মাসে হাওরাঞ্চলে মাছের উৎপাদন বেশি থাকে। মেছো বিড়াল রোগাক্রান্ত মাছ খেয়ে খামারির উপকার করে থাকে। তাদের ওপর আক্রমণ করা ঠিক নয়। প্রকৃতিতে নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত না করতে পারলে বিপন্ন এই প্রাণী এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ সম্পর্কে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডব্লিউসিএস) বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী অপরাধ দমন প্রোগ্রামের সমন্বয়কারী সামিউল মোহসেনিন বলেন, মেছো বিড়ালকে কেউ কেউ মেছো বাঘ বা বাঘরোল বলেও ডাকেন। প্রাণীটির ইংরেজি নাম ঋরংযরহম ঈধঃ, বৈজ্ঞানিক নাম চৎরড়হধরষঁৎঁং ারাবৎৎরহঁং. মাঝারি আকারের বিড়ালগোত্রীয় এক ধরনের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী। বিগত কয়েক দশকে এগুলোর সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। জনবসতি স্থাপন, কৃষিজমিতে রূপান্তর, জলাভূমিগুলো দিন দিন সংকুচিত ও হ্রাস পাওয়াই এর মূল কারণ। তাই আইইউসিএন ২০০৮ সালে মেছো বিড়ালকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। প্রাণীগুলো সাধারণত পাহাড়ি ছড়া এবং জলাভূমিতে বাস করে। এরা সাঁতারে পারদর্শী হওয়ায় এ ধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। এদের গায়ে ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকার জন্য চিতাবাঘ বলেও ভুল করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এটিকে সেই রাজ্যের জাতীয় প্রাণী তকমা দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply