বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০২:৩০ অপরাহ্ন

চুনারুঘাটে এক মাসে ১০ কোটি টাকার মাদক জব্দ ॥ মূল চোরাকারবারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

চুনারুঘাটে এক মাসে ১০ কোটি টাকার মাদক জব্দ ॥ মূল চোরাকারবারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

নুরুল আমিন, চুনারুঘাট থেকে ॥ মাদক চালানের নিরাপদ করিডোর চুনারুঘাট। ভৌগোলিক কারণে উপজেলাটি পাহাড় ও চা বাগান বেষ্টিত হওয়ায় এখানে মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে সুবিধাভোগীরা চালাচ্ছে মাদকের কারবার। বিগত ৪/৫ বছরে চুনারুঘাটে মাদক কারবারি বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। বেকার নারীরা এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও এ ব্যবসায় নেমেছে। এক কথায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মাদক ব্যবসা। যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে মাদক ব্যবসা বেড়েছে কয়েকগুণ। গত ডিসেম্বর মাসে ৫৫ বিজিবি জোয়ানরা সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ১০ কোটি টাকার মাদক ও চোরাচালান পণ্য আটক করেছে।
বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তার সুযোগে মাদক কারবারীরা এ ব্যবসায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এ ব্যবসায় দিন দিন যোগ হচ্ছে নতুন ব্যবসায়ী। বিদেশ ফেরত প্রবাসী, শিক্ষার্থী, গৃহিণীসহ শিশু-কিশোররা এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সোর্সরা এ ব্যবসা থেকে আদায় করে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের বখরা। বিজিবি’র ৫৫ ব্যাটালিয়ানের জোয়ানরা গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার মাদক, ৭ ডিসেম্বর ৬৩ কেজি গাঁজা, ১০ ডিসেম্বর ৪৫ কেজি গাঁজা, ১১ ডিসেম্বর ৯০ লাখ টাকার গাঁজাসহ চোরাই পণ্য, ১২ ডিসেম্বর কাপড়, কসমেটিক্স ও গাঁজা, ১৫ ডিসেম্বর চা বাগান থেকে ৫০ কেজি গাঁজা, ১৮ ডিসেম্বর চা বাগান থেকে ৩৫ কেজি গাঁজা, ১৯ ডিসেম্বর গারো টিলা থেকে ৭০ কেজি গাঁজা, ২৫ ডিসেম্বর সীমান্তের ১৯৮৩নং পিলারের অদূরে কসমেটিকস, শাড়ি, গাঁজাসহ দেড় কোটি টাকার পণ্য, ২৮ ডিসেম্বর ৫৮ কেজি গাঁজা আটক করা হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান ৫৫ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ইমদাদুল বারী খান।
পুলিশ মাসে মাসে লোক দেখানো মাদকের চালান আটক করলেও তা কোথায় জমা হয় সে তথ্য কারও কাছে নেই। চুনারুঘাটের সদ্য বিদায়ী ওসি নজরুল ইসলাম নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে মাদকের কয়েকটা চালান আটক করে ছেড়ে দেন। বিষয়টি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তাকে তাৎক্ষণিক ময়মনসিংহ রেঞ্জে বদলি করা হয়। গত ২৮ নভেম্বর উপজেলার নয়ানী গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৩০ কেজি গাঁজাসহ বশির ও একই দিন আমকান্দি থেকে শরিফুলকে ৩০ কেজি গাঁজাসহ আটক করে চুনারুঘাট থানা পুলিশ। পরবর্তীতে ছাত্রদলের জনৈক নেতার কথায় আসামিদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেন এবং এ মামলায় সীমান্তের কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জুড়ে দেন। গাজীপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম টিলাবাড়ি, টেকেরঘাট, মোকামঘাট, রেমা, কেদারা কোর্ট, বড়খের সহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে চোরা ব্যবসায়ীরা। একটি সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি গাঁজা আসে আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল এলাকা দিয়ে। গ্রামটি লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন ও পাহাড়ি হওয়ায় চোরাই ব্যবসায়ীরা নিরাপদে এখান দিয়ে মাদক পাচার করে থাকে। এই গ্রামে মাদকের আধিপত্য নিয়ে চলছে লড়াই, মারামারি, মামলা পাল্টা মামলা। উপজেলার বাসুল্লা-নালমুখ সড়ক, রানীগাঁও-সাটিয়াজুড়ি সড়ক, চুনারুঘাট-বাল্লা সড়ক, আমু চা বাগান-সাতছড়ি সড়ক, আমু চা বাগান-কালিশিরি সড়কসহ প্রায় সব সড়ক পথেই চোরাচালান হয়। চোরা ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসায় কালো ব্যাগ, নারী ও শিশুদের ব্যবহার করে। নারীরা শরীরের সঙ্গে এঁটে গাঁজার চালান নিয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কিশোররা স্কুল ব্যাগে করে পাচার করছে গাঁজা। প্রায় সব চোরাকারবারির রয়েছে মোটরবাইক। ভারতের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকায় এক কেজি গাঁজা কিনে তারা পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এদের কারও কারও রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। ধৃত গাঁজার কোনো সন্ধান নেই। এ নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মাঝে মধ্যে মাদক বহনকারীদের আটক করে। কিন্তু মূল ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বহনকারীদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা গড ফাদাররাই করে থাকে। গড ফাদারদের আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। অতি সম্প্রতি চা বাগানের শ্রমিকরাও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। চা জনগোষ্ঠীর দোহাই দিয়ে শত শত যুবক গাঁজা ব্যবসায় নেমে পড়েছে। এ বিষয়ে বিজিবি’র ৫৫ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইমদাদুল বারী খান বলেন, সীমান্তে মাদকসহ চোরাচালান রোধে বিজিবি সদা তৎপর রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com