স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৪৩ কেজি ওজনের একটি কাতলের দাম চাওয়া হচ্ছে দেড় লাখ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা মিলে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাছটির দাম বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) পইলের মাছের মেলায় এ মাছটি নিয়ে এসেছেন জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুতাং গ্রামের মজনু মিয়া। তার দোকানে ২৩ কেজি ওজনের একটি বোয়াল আর ছোটবড় নানাজাতের মাছও রয়েছে। এসব মাছ সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওরের বলে দাবি তার। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল নতুন বাজার মাঠে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে মেলা শুরু হয়। একদিনের মেলা হলেও মঙ্গলবার দুপুর থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত মেলায় বেচাকেনা চলবে। এ মেলায় পাঁচ শতাধিক বিক্রেতা অন্তত কোটি টাকার মাছ বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেলায় সব চেয়ে বড় মাছ দেখা গেছে গেছে মজনু মিয়ার দোকানেই। ৪৩ কেজি ওজনের কাতলা মাছটি তিনি দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান। এছাড়া ২৩ কেজি ওজনের এক বোয়ালের দাম চাইছেন ৩৬ হাজার টাকা। বড় মাছ বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছেন বানিয়াচং উপজেলার রামগঞ্জ গ্রামের মানিক মিয়া, কিশোরগঞ্জে কুলিয়ারচরের ইমরান আহমেদ ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মুদ্দত মিয়া। তারা জানান, গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় মাছ বেচাকেনা চলবে। এত তাড়াহুড়ো নেই। পছন্দের দাম পেলে তবেই তারা মাছ বিক্রি করবেন। মানিক মিয়া জানান, তিনি প্রায় চার লাখ টাকার মাছ বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে এনেছেন। এ মাছ পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। এদিকে ইমরান ও মুদ্দত মিয়ার দোকানে ৩০ ও ৩২ কেজি ওজনের দুটি বাঘাইড় মাছ ঘিরে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের ভিড় করতে দেখা গেছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের চোখে বাঘাইড় মাছ ধরে বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও ছোটবড় কয়েকশ’ বাঘাইড় মাছ পইলের মেলায় প্রকাশ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে। মেলা ঘুরে দেখা যায়, পাঁচ শতাধিক বিক্রেতা হরেক রকম মাছ নিয়ে বসেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রুই, কাতল, বোয়াল, মৃগেল, শিং, মাগুর, কই, পাবদা, চিংড়ি, চিতলসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। হবিগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা থেকে ক্রেতারা এসেছেন এখানে মাছ কিনতে। মাঠের কয়েকদিকে রয়েছে হরেকরকম ভাজাপোড়া খাবার ও বাচ্চাদের খেলাধুলার জিনিসপত্র। বিকেলে ক্রেতাদের উৎসবমুখর উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে ওঠে মেলা। জানা গেছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতিবছর এ মেলা হয়ে থাকে। শতবর্ষী এ মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মেলা আয়োজক কমিটির একজন শিবেন্দ্র চন্দ্র দাশ শিবু, তিনি জানান, ২০২৩ সালে পইলের মাছের মেলায় সোয়া দুই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছিল। এবারও কেনাবেচা এর কাছাকাছি থাকবে। মেলায় প্রকাশ্যে বাঘাইড় মাছ বিক্রির বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে এ মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগ আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।
Leave a Reply