চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট পৌরসভা প্রথম শ্রেণির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পরও সেখানে কোনো বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা হয়নি। ফলে পৌরসভার বর্জ্য সরাসরি খোয়াই নদীতে ফেলা হচ্ছে, যা পরিবেশ দূষণ এবং নদীর জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। চুনারুঘাট পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পুরাতন খোয়াই নদীতে বর্জ্য ফেলতে শুরু করেন। ১৮ বছরের ব্যবধানে এই নদী ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে নদীটি পরিষ্কার করা হয় এবং পুরাতন খোয়াই তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পায়। তবে এরপরও স্থায়ী কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। সাবেক মেয়র সাইফুল আলম রুবেল পৌরসভার বর্জ্য ফেলার জন্য চলমান খোয়াই নদীর পশ্চিম পাকুড়িয়া ব্রিজের পাশে একটি অস্থায়ী স্থান নির্ধারণ করেন। কিন্তু এটি কোনো স্থায়ী সমাধান ছিল না।
জরিপ অনুযায়ী, চুনারুঘাট পৌরসভায় প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টন বর্জ্য তৈরি হয়। যার সবটাই খোয়াই নদীতে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে নদীর পানি দূষিত হয়ে মিঠা পানির দেশীয় মাছ যেমন কই, শিং, মাগুর, শোল, বোয়াল, পুঁটি, টেংরা প্রভৃতির উৎপাদন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় খোয়াই নদী নির্ভর মৎস্যজীবীরা গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তদুপরি দূষিত পানি ব্যবহার করে এলাকাবাসী চর্মরোগ, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর চুনারুঘাট পৌরসভা গঠিত হয় এবং ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ৮ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। তবে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হলে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন সম্ভব ছিল। তারা পৌরসভার সাবেক মেয়রদের অদূরদর্শিতাকেই এ সমস্যার জন্য দায়ী করছেন। পৌরবাসীর দাবি, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণের মাধ্যমে রিসাইক্লিং করা বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন এবং পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি একটি স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনও নির্মাণ করা প্রয়োজন। চুনারুঘাট পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে চুনারুঘাট পৌরসভার প্রশাসক ও চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, নদীতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
Leave a Reply