শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ দীর্ঘকাল ধরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ অঞ্চলে বাঁশের বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী তৈরি হয়ে আসছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এলাকায় সরবরাহ করা হতো এসব পণ্য। কিন্তু বাঁশের মূল্যবৃদ্ধি এবং যে, অনুপাতে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে সংকট। ফলে এ পেশার ১০ থেকে ১৫ হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। অর্থ কষ্টে এসব পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে ও বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকে টিকে থাকতে না পেরে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। বিগত বছর তিনেক হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুর চুনারুঘাট থানার বিভিন্ন এলাকায় বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করা হতো।
এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বাঁশের মোড়া, ডালা, কুলা, দোলনা, চেয়ার র্যাক, ঝুড়ি, চাটাই, কলমদানী, ফুলদানী, কলমদানী, বাঁশি কিংবা গৃহসজ্জায় বাহারি পণ্য বিক্রয় করে সংসার চলে তাদের। এভাবেই এ অঞ্চলে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সহস্রাধিক পরিবার। কিন্তু একে একে বিলিন হচ্ছে প্রয়োজনীয় এই বাঁশ ও বাঁশঝাড়। এর জন্য কৃষি বিভাগ উদ্যোগের প্রয়োজন মনে করলেও বাস্তবে নিচ্ছেন না কোন উদ্দৌগই। নেই সরকারি বেসরকারি কোন প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা। লাদিয়া গ্রামের মানিক মিয়া জানান, বংশ পরম্পরায় কয়েক পুরুষ ধরে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে তার পরিবার। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা ও পৌর অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারে উৎপাদিত বাঁশের পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চলে তার। স্ত্রী ছেলেমেয়েসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার চলে এই বাঁশ শিল্পের উপর। নিজ বাড়িতে তৈরি করেন ঝুড়ি, ডালা, কুলা, মোড়া, সোফা ও দোলনাসহ অন্যান্য সামগ্রী। এর পর তা শায়েস্তাগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু ঐসব পণ্য তৈরি করতে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত তল্লা বাঁশের তীব্র সংকট দেখা যায় আবার অনেক চড়া দামে কিনতে হয়। তিনি জানান, একেকটি তল্লা বাঁশ কয়েক বছর আগে ও ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তা এখন কিনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। সে অনুপাতে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ছে না। ফলে চরম সংকটের মধ্যে পড়েছেন তিনি। মানিক মিয়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থ কষ্টের কারণে ছেলেমেয়ে লেখাপড়া ও ভরণ-পোষণ করতে পারছেননা। প্রতি বছর বিভিন্ন মৌসুমকে কেন্দ্র করে তাদের থাকে বাড়তি ব্যস্ততা। অর্ডার পেয়ে পাইকারদের চাহিদা অনুসারে পণ্য সরবরাহ করতে হয় বলে জানান। লাদিয়া গ্রামের আঙ্গুরা খাতুন বাঁশ দিয়েই মোড়া তৈরি করে সংসার চালান। মোড়া বিক্রি থেকে প্রতি মাসে আয় হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আঙ্গুরার স্বামী এ কাজে সহযোগীতা করেন। বাঁশ কিনে আনেন তিনি। জানালেন মোড়া তৈরির কৌশল। বাঁশ চিরে ১০-১২ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর শলা তৈরি করা হয়। শলার সুতলি প্লাস্টিক ও রিকশার অব্যবহৃত টায়ার দিয়ে তৈরি হয় ছোট মাঝারি ও বড় এ তিন ধরনের মোড়া। শায়েস্তাগঞ্জের পৌর শহরের এলাকার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বাইরা নলি ও মলি এ তিন ধরনের বাঁশ পাওয়া যায়। বাইরা দিয়েই বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরিতে সুবিধা বেশি। ডালা, কুলা, পালি, পানডালা ও মাছ ধরার ঝুড়ি বাইরাতেই সুবিধা। প্রতিটি ডালা ৪০, খাঁচা ৭০ ঝুড়ি ১০০ ও পানডালা ৮০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা। কুলা ও পালির চাহিদা থাকে ১২ মাস। প্রতিটি কুলা ৯০ ও পালি ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
Leave a Reply