স্টাফ রিপোর্টার ॥ খোয়াই নদীর কান্না। নীরব নিস্তব্ধ এই কান্না কেউ শুনতে পায় না,দেখতে ও পায় না। সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষে নিলাম দেয়া সংশ্লিষ্ট এলাকা ছাড়াই চলছে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের মহড়া। বিগত সরকারের সময়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাল্লা থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত বেপরোয়া ওই মহড়া এখনো থামছে না। পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের আদেশ- নিদের্শের তোয়াক্কাই করছে না বালু ও মাটি খেকো চক্র। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চলে, জরিমানা আদায় সহ বালু উত্তোলনের যন্ত্রপাতি ধ্বংস করা হয়। পরক্ষনেই আবারো সক্রীয় হয়ে উঠে বালু ও মাটি খেকো চক্র। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রশাসনের সাথে যেন অবৈধ বালু ও মাটি খেকো চক্রের এক ধরনের প্রতিযোগিতা। খোয়াই, করাঙ্গী, সোনাই, ইছালিয়া সহ চা বাগান ও পাহাড়ী ছড়ার বালু ও মাটি কাটা এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। কোন টি লীজ আর কোনটি লীজ নয় তা নির্ণয় করার ও কোন উপায় নেই। যে কারনে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও বালু খেকোরা আইন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তোয়াক্কা না করেই রামরাজত্ব কায়েম করে চলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে বালু ও মাটিকুরদের কুটির জোর কোথায়? খোয়াই, করাঙ্গী, ইছালিয়া, সোনাই সহ চা বাগান ও পাহাড়ী ছড়ার বুকে চলছে যন্ত্র দানবের হিংস্র থাবা। ড্রেজার, এস্কেভেটর সহ নানা যন্ত্রপাতির দানবীয় আঘাত। কোদাল, ভেলচা কোন কিছুই বাদ যায়নি নির্বাক নদী ছড়ার বুকে নির্মম আঘাতের পর আঘাত। ড্রাম ট্রাক, ভারী ট্রাক – ট্রাকটরের চাকায় পিচ ঢালা পথের আহাজারি কারো নজর কাড়ে না। ধূলো বালি আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। জনজীবনে নেমে আসছে নানা বিপর্যয়। এদিকে সব কটি উপজেলা প্রশাসনই কোন না কোন ভাবে অভিযান পরিচালনা করে আসছে কিন্তুু থামছে না বালু মাটি খেকোদের আগ্রাসী কর্মকান্ড। ভাটি বাংলার নদী, বিল, জলাশয়ও এ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত করে পেয়েছে, ভারত থেকে প্রবাহিত ইছালিয়া ছড়ায় সিলিকা বালু নেই বা সিলিকা বালুর কোন অস্তিত্বই নেই। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ও জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তুু খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় মৌজা বা কোন এলাকা লিজ দিয়েছে এর কোন অস্তুিত্বই নেই। যারা বা যাদের নামে ইজারা দেয়া হয়েছে এদেরও কোন নাম ঠিকানা পরিচয় নেই। অথচ প্রতিদিন ইছালিয়া ছড়া থেকে ড্রাম ট্রাক, ট্রাক, ট্রাকটর দিয়ে সিলিকা বালু নয়, ছড়ার তলদেশ সহ আশপাশের মানুষের জমি কেটে নিচ্ছে একটি চক্র। এ বিষয়ে একাধিকবার সংবাদপত্রে সচিত্র সংবাদ প্রকাশ হলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গৃহিত হয়নি। ইছালিয়ার সিলিকা বালুর লীজ গ্রহিতা জনৈক মিজানুর রহমান। কিন্তুু তিনি জীবিত না মৃত এর কোন অস্তিত্বই নেই। অথচ সুজাত ভূইয়া নামের এক ব্যাক্তি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ ইছালিয়া ছড়া, ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি এমনকি কবর স্থান পর্যন্ত মাটি কেটে ইছালিয়া আসামপাড়া সড়কের পাশে পর্বতসম স্তুুপ করে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে ড্রাম ট্রাক, ট্রাক বোঝাই করে বালু পাচার করছে। অনেক নীরিহ কৃষকের ইছালিয়া ও মুড়িছড়ার তীরের ফসলি জমি জোরপুর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নীরিহ কৃষককূল সুজাত ভূইয়ার শক্তিশালী সিন্ডিকেটের এই অবৈধ কর্মকান্ডের কোন প্রতিবাদই করতে পারছে না। ইউ এন ও বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। এদিকে আওয়ামীলীগের ১৬ বছরের শাসনামলে সুজাত ভূইয়া কয়েক হাজার কোটি টাকার এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে ছিল। পটপরিবর্তনের পর আমেরিকা পালিয়ে গেছে। তারপরও সুজাত সিন্ডিকেট ইছালিয়া ও মুড়ি ছড়ার বালু, মাটিও কৃষকদের জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর এর মূল দায়িত্বে রয়েছেন গোবরখলা গ্রামের জানু মিয়া নামের এক ব্যাক্তি। তিনি এমনই ক্ষমতাশালী যে, প্রশাসনকে কোন পাত্তা দেন না। খোয়াই প্রতিরক্ষাবাধ সহ করাঙ্গী, সোনাই, ইছালিয়া সহ চা বাগান ও পাহাড়ী ছড়াগুলো যে ভাবে কুঁড়ে কুঁড়ে বালু ও মাটি খেকোরা গিলে খাচ্ছে তা আগামী বর্ষায় হবিগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলে কি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে এনিয়ে ওই এলাকার সাধারন মানুষ শংকিত। এমনকি হবিগঞ্জ জেলা শহরও এর ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় থাকবে না। খোয়াই নদীর অনেক প্রতিরক্ষা বাঁধ ও ওই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। বর্ষা মৌসুমে ওই বাধ গুলো ভেঙ্গে জনপদ যে বিলীন হবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। অনেকেই বলছেন, খোয়াই, করাঙ্গী, ইছালিয়া, সোনাই, পুরাতন কুশিয়ারা সহ চা বাগান ও পাহাড়ী ছড়ার কান্না পরিবেশ মন্ত্রণায় বা প্রশাসনের কানে পৌঁছায় না। নদী ছড়া খাল ছাড়াও ফসলি জমির উর্বর মাটি অবাধে কেটে নেয়ার ফলে ফসলী জমির উর্বর শক্তি হারাচ্ছে। ফসল উৎপাদনেও ভাটা পড়ছে। পরিবেশবাদী বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এসবের দিকে ভ্রুক্ষেপই নেই। অবশেষে কি হচ্ছে পরিবেশ- প্রতিবেশ কে ই বা জানে। ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতনের পর এখন বালু ও মাটি খেকোদের হাত বদল হয়েছে মাত্র। কিন্তুু বালু ও মাটিখেকোদের উল্লাস থেমে নেই। দিন দিন যেন প্রতিযোগিতা দিয়ে মহড়া বেড়েই চলেছে। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্মানিত উপদেষ্টা হবিগঞ্জের গর্ব সৈয়দা রেজোয়ানা হাসান দায়িত্বে থাকলেও অবৈধ বালু ও মাটিখেকোদের আগ্রাসন কেন বন্ধ হচ্ছে না এ নিয়েও নানা প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনিও পরিবেশ সংক্রান্ত বেলা’র একজন কর্ণধার।
Leave a Reply