সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন

শ্রমিক সংকটে বিপদে কৃষক বন্যার শঙ্কা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ

শ্রমিক সংকটে বিপদে কৃষক বন্যার শঙ্কা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্যার আশঙ্কা মাথায় নিয়ে হবিগঞ্জ জেলায় চলছে ধান কাটার কাজ। ব্যস্ত হাতে মাঠের ফসল ঘরে তোলায় কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় বোরো চাষিরা। শ্রমিক সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম। ধান কাটা মৌসুমের শুরুতেই এবার বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে দ্রুত মাঠের কাজ শেষ করতে শ্রমিকের খোঁজ শুরু করেন কৃষকরা। তবে সংকটের কারণে হতাশ হতে হচ্ছে তাদের। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে ধান কাটা। হাওরে জমির ধান পেকে গেলেও শ্রমিক সংকটের কারণে তা কাটতে পারছেন না কৃষকরা। যদিও কম্বাইন হারভেস্টারসহ স্থানীয় শ্রমিকের মাধ্যমে কিছু কিছু জমির ধান কেটে ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের কেউ কেউ। এরই মধ্যে আবার আগামী কয়েক দিন হবিগঞ্জসহ সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণ ও উজানের পানি নেমে আসার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। এমনটা হলে তলিয়ে যেতে পারে হাওরের নিচু এলাকা। শ্রমিক সংকট কাটাতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন তারা। সরেজমিন জেলার সবক’টি হাওরে দেখা গেছে একই দৃশ্য। পাকা ধানে ভরপুর ফসলের মাঠ। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই দ্রুত সময়ে গোলায় ধান তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। শ্রমিক সংকটের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। মাঠে কাজ করতে থাকা কৃষকরা এমনটাই জানিয়েছেন। সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারার দুশ্চিন্তা তাদের মনে। এদিকে বন্যার কবলে পড়ার আশঙ্কায় অনেকে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে জমির ধান কাটা হচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলার ৯টি উপজেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৪ হেক্টর জমিতে তিন ধরনের বোরো ধান আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ৫০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর হাইব্রিড, উফশী জাতের ৭২ হাজার ৮০১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয় ৫০ হেক্টর জমিতে। হাইব্রিড জাতে হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৬৮ টন, উফশীতে ৬ দশমিক ৯৩ টন ও স্থানীয় জাতের ধান প্রতি হেক্টর থেকে ১ দশমিক ৯ টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী, হবিগঞ্জে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৪৯ টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের হিসাবে গেলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫১৮ টনে। শ্রমিক সংকট নিয়ে লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, হাওরে ধান পেকে গেছে। শ্রমিক না পাওয়ায় তা কাটাতে পারছি না। স্থানীয় শ্রমিকরা একদিকে যেমন মজুরি বেশি চাইছেন অন্যদিকে আবার তাদের সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে ধান কাটা ব্যাহত হচ্ছে। একই এলাকার কৃষক ফয়সল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাচ্ছি না। কৃষি উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ না ওঠার শঙ্কায় আছি।
বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের কৃষক তাহের মিয়া বলেন, প্রতি বছরই জেলার বাইরে থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসে। এবার এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত শ্রমিক আসেনি। যে কারণে সংকট তীব্র হয়েছে। শ্রমিক না পেয়ে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটাতে হচ্ছে। হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আসতে শুরু করেছে। তারা এলে শ্রমিক সংকট কেটে যাবে। শ্রমিকের পাশাপাশি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান জানান, বন্যা ও শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় জেলায় অতিরিক্ত ধান কাটার যন্ত্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com