স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রদত্ত নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করছেন চুনারুঘাট উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কাজ স্কুল/ক্লাস্টার ভিত্তিক হওয়া উচিত এবং এর তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার। বিগত দিনগুলোতে এই পদ্ধতিই অনুসৃত হচ্ছিল। কিন্তু এই বছর চুনারুঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নিজে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। শিক্ষকরা নীতিমালার আলোকে কাজ করার কথা বললেও তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। নিজ ক্ষমতা বলে তিনি প্রশ্নপত্র প্রণয়নে খরচ করেছেন বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ। গত বৃহস্পতিবার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ক্লাস্টারের প্রধান শিক্ষকগণকে ফোন করে বলেন, সকল প্রধান শিক্ষক যেন রবিবার (১৭ আগস্ট) চুনারুঘাট উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেন। এবং ১ম ও ২য় শ্রেণির জন্য ৮ টাকা এবং ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির জন্য ১৫ টাকা হারে চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের মূল্য পরিশোধ করেন। বিষয়টি সকল প্রধান শিক্ষকদের জানানো হলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যেখানে স্থানীয়ভাবে (হবিগঞ্জ জেলার ভিতরে) দু’মাস আগে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে সর্বোচ্চ খরচ হয় ১ম ও ২য় শ্রেণির জন্য ৫ টাকা এবং ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির জন্য ৮ টাকা, সেখানে ঢাকা থেকে ছাপানো হলে আরও কম খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে দ্বিগুণ বেড়ে গেল কীভাবে? বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে চাইলে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। গতকাল রবিবার (১৭ আগস্ট) সকালে উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জড়ো হন। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা তাদেরকে ৫ টাকা ও ১৫ টাকা হারে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে বললে তারা তাতে আপত্তি জানান। শিক্ষকদের বক্তব্য অনুযায়ী, যতটা সম্ভব কম খরচে মানসম্মত ক্রয় এবং কাজ করানোর আদেশ রয়েছে তাদের প্রতি। কোনো কারণ ছাড়াই প্রশ্নপত্রের ব্যয় খরচ দ্বিগুণ দেখানো হলে এর কৈফিয়ত তাদের উপর বর্তাবে। এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের সব জায়গাতেই প্রশ্নপত্র প্রণয়নের খরচ ৮ টাকা ও ১৫ টাকা হারে। শিক্ষকদের আপত্তির কারণে তিনি ৫ টাকা ও ৮ টাকা হারেই প্রশ্নপত্র প্রদান করেছেন। তবে অন্যান্য উপজেলায় ৮ টাকা ও ১৫ টাকা হারে নেয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলার ভিতরে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করলে ফাঁস হয়ে যেতে পারে, তাই তিনি ঢাকা থেকে প্রণয়ন করেছেন। শিক্ষকরা আরও বলেন, নাজনীন সুলতানা চুনারুঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদানের পর থেকেই নিয়মিত গড় হাজিরা দেন। সপ্তাহে গড়ে ২ দিন অফিস করেন এবং কোনো কোনো সময় পুরো সপ্তাহেই অনুপস্থিত থাকেন। তিনি বিদ্যালয়ের স্লিপের বরাদ্দকৃত টাকার চেকে স্বাক্ষর নিতে ৫/১০ হাজার টাকা ঘুষ নেন (এটিইওদের মাধ্যমে) বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে সিএনজি ভাড়ার কথা বলে টাকা নিয়ে থাকেন। শিক্ষকদের চাকরির স্থায়ীকরণের জন্য জনপ্রতি মোটা অংকের টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন পার হয়েছে অথচ এখনো স্থায়ীকরণের ২/১টি ফাইল উনার কাছেই পড়ে রয়েছে। শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেডের কাজ করতেও মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দাবি করেন। এতে শিক্ষকরা উনার চাহিদা মতো বেশি টাকা দিতে না পারলে ফাইল আটকে রাখার ও অভিযোগ রয়েছে।
Leave a Reply