চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট উপজেলার পুরাতন ঢাকা সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সাতছড়ি পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার সড়ক মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। সরু ও ভাঙ্গাচোরা এ সড়কে গত ৫ বছরে অর্ধশত মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে অধিকাংশই মোটর বাইক ও ট্রাক চাপায় প্রাণ হারান। বার বার সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো এবং প্রচার প্রচারনার পরও থামছে না মৃত্যু। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এ সড়কে ঘটছে দূর্ঘটনা। মারা যাচ্ছে মানুষ, আহত হচ্ছে অনেকেই। ঢাকা সিলেট পুরাতন মহাসড়কের চুনারুঘাট থেকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ ৮ কিলোমিটার সড়কের চানভাঙ্গা বিপদজ্জসক বাক, শ্রীকুটা থেকে চুনারুঘাট বাজার এবং চুনারুঘাট থেকে সাতছড়ি ১৩ কিলোমিটার সড়কে চন্ডিছড়া বিপদজ্জনক বাক, রামগঙ্গা ব্রীজ, আমতলী ব্রীজ সংলগ্ন বাক, চান্দপুর বাক, চা বাগানের আকাঁবাকা সড়ক এবং সাতছতি কনিমুছড়া এলাকা মারাত্বক ঝুকিপূর্ণ। এসব স্থানেই বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে এসব স্থানে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতামুলক সাইনবোর্ড ন্থাপন এবং প্রচার প্রচারনা করেছে। সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের পরও থামছে না দুর্ঘটনা। বিশেষ করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এবং চা বাগানের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বাইকারদের ভীড় বেশি। তাদের অধিকাংশের বেপরোয়া গতির কারণেই বাড়ছে দুর্ঘটনা। এতে ঝড়ছে প্রাণ। এছাড়া চুনারুঘাট- বি-বাড়িয়া বালুবাহী ট্রাকের অবাধ চলাচল এবং বেপরোয়া চালকের কারণেও এ সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। চুনারুঘাট থেকে শায়েস্তাগ্জ সড়কের চানভাঙ্গা সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ন। এই একই স্থানে গত বছর এক সপ্তাহেই ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। একই ভাবে চন্ডিছড়া বিপদজ্জসক বাক ও রামগঙ্গ ব্রীজ এলাকায় প্রতি সপ্তাহের দুর্ঘটনা ঘটছে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত ৫ বছরে এই ২১ কিলোমিটার সড়কে কমপক্ষে ৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে মোটর বাইক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া সিএনজি, ট্রাক ও মাইক্রো দুর্ঘটনা তো রয়েছেই। তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে রামগঙ্গা ব্রীজে ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান শায়েস্তাগঞ্জের দুই মোটরসাইকেল আরোহী। তারা হলেন তরুন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান (৩০) ও হাফিজুর রহমান(২৮)। চানভাঙ্গা মোড়ে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর সকালে ত্রিমুখী ট্রাক, পিকআপ ও সিএনজির সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৪ জন। তারা হলেন বগাডুবি গ্রামের মঈনুল ইসলাম রাব্বি (৩৪) কালিশিরি গ্রামের নাজমা আক্তার (৪৫) বনগাও গ্রামের ফারিয়া আক্তার (৩০) লাদিয়া গ্রামের রুমেল মিয়া (৫৫)। এ ঘটনার ৩দিন পর একই স্থানে সিএনজি দুর্ঘটনায় মারা যান দুর্গাপুর এলাকার সিএনজি চালক পারভেজ মিয়া (৩২) ও রাজাপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন (৩০)। এর এক সপ্তাহ আগে ১ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর এলাকায় সিএনজি ও ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান সিএনজি চালক জামাল মিয়া (৩৫) ও যাত্রী ফরিদ মিয়া (৫৬)। এর আগের ২০২২ সালে ছাত্রলীগ নেতা সিপন চুনারুঘাট সাতছড়ি সড়কেই বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান। চলতি বছরের ২৪ মার্চ এ সড়কে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বিশাল উড়াং নামে এক চা শ্রমিক। ২০২২ সালের ২ মার্চ এ সড়কের চান্দপুর নামক স্থানে ট্রাকের চাপায় দুই যুবক মারা যায়। একই বছরের ২২ মে আমতলী এলাকায় অজিত বাবু নামে এক বৃদ্ধ ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান। ২০২৩ সালের ২ মে একই সড়কে শাহজাহান মিয়া নামে যুবক ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ বছরে এ সড়কের চন্ডিছড়া মাজারের আগে বিপজ্জনক বাঁকে প্রাণ হারান চুনারুঘাট ও মাধবপুরের কমপক্ষে ৯ যুবক ও বৃদ্ধ। স্থানীয়রা বলছেন, অদক্ষ ড্রাইভার, বিপজ্জনক বাঁক, বেপরোয়া চালক, প্রতিযোগিতামুলক বাইকারদের দৌড়াত্ব এবং বালুবাহী ট্রাকের কারণেই এ সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই চুনারুঘাট উপজেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক কামরুল ইসলাম বলেন, চালকদের পাশাপাশি মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। বেপরোয়া চালক এবং এ সড়কে চলাচলকারী বালুর ট্রাকও প্রাণহানির জন্য দায়ী। তিনি চালকদের সচেতনতা তৈরী এবং আইনের যথাযত প্রয়োগের দাবি জানান।
Leave a Reply