শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নবীগঞ্জে লটারির মাধ্যমে ১৩ ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগ লাখাইয়ে পুলিশ দেখে ভয়ে পালাতে গিয়ে যুবলীগ নেতার মৃত্যু হবিগঞ্জে ২২ বছর পর হত্যা চেষ্টা মামলার রায়ে ৮ জনই খালাস ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশকালে হবিগঞ্জের ৩ যুবক আটক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে গাঁজাসহ কারবারি গ্রেফতার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে দুদকের হবিগঞ্জ উপ-পরিচালকসহ ৩ সদস্যের অভিযান লাখাইয়ে পার্টানার কংগ্রেস কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জে ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশ নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা মাধবপুরে দুনীর্তি প্রতিরোধ কমিটির বির্তক প্রতিযোগিতা বানিয়াচংয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ॥ দেখার যেন কেউ নেই
ছাত্র আন্দোলনে সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনা হয়নি শহীদ রিপনের

ছাত্র আন্দোলনে সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনা হয়নি শহীদ রিপনের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিয়ে করেছিলেন দু’বছর আগে। পেশায় ছিলেন সেলুন কর্মচারী। অভাব-অনুযোগ থাকলেও সংসারে সুখের কমতি ছিল না। ছয় মাস আগে জন্ম নেয় একমাত্র ছেলে। নাম রেখেছিলেন আবির বিশ্বাস স্বাধীন। যেন বুঝতেই পেরেছিলেন দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হতে চলেছে।
সন্তানকে নিয়ে দেখতেন নানান স্বপ্ন। পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। অথচ সেই স্বপ্নবাজ বাবার বাবা ডাকই শোনা হয়নি সন্তানের মুখ থেকে। সন্তানের মুখে কথা ফোটার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। বলছিলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ রিপন শীলের কথা। ৪ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে স্থানীয় এমপি আবু জাহিরসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে শহীদ হন তিনি। হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছের বাসায় ভাড়া থাকে রিপন শীলের পরিবার। তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার পইল গ্রামে। একমাত্র বড় বোন চম্পা রানী বিশ্বাস ভাইকে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন। বলছিলেন, ‘৪ আগস্ট সকাল থেকেই খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল রিপন। পরে পেটভরে খেয়েছে। আমি আশ্চর্য হলাম। কীরে এমন করে খাচ্ছিস কেন? বললো প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। খাবারও অনেক স্বাদ হয়েছে। এটিই যে আমার ভাইয়ের শেষ খাবার তাতো বুঝতে পরিনি। খাবার শেষে তাকে বারবার সাবধান করছিলাম, ঘর থেকে বের হবি না। কিন্তু মিছিলে চলে গেলো।’ চম্পা রানী আরও বলেন, ‘ছাত্রজীবনে সে (রিপন শীল) ছাত্রদল করতো। এটিই তার অপরাধ। আওয়ামী লীগের গুন্ডারা তাকে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই হত্যাকারীদের।’ শহীদ রিপনের মা মামলার বাদী রুবি রানী শীল সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। কথা বলতে পারছিলেন না তেমন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ এত অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তুষ্টি রানী শীল। তিনি বলেন, ‘আমার ঠিকমতো সংসার বোঝাই হয়নি। আমার ছেলে বাবাকে দেখতে পারেনি। তার মুখ থেকে বাবা ডাক ফোটার আগেই বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। যারা আমার ছেলেকে বাবাহারা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’ আহত অবস্থায় রিপনকে হাসপাতালে নেন জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রুবেল আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রিপন আমার কাছেই ছিল। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী অনবরত গুলি ছুড়তে থাকলে হঠাৎ একটি বুলেট রিপনের পেটে এসে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমার জামা-কাপড় সব রক্তে ভিজে যায়। আমার কোলেই সে মারা গেছে। কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি।’ শহীদ রিপন শীলের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাসায় যুগ যুগ ধরে ভাড়া থাকছে পরিবারটি। তারা নিয়মিত ভাড়াও পরিশোধ করে আসছিল। এ বাসাতেই তাদের ভাই-বোনদের জন্ম হয়। রিপন শহীদ হওয়ার পর আমি তাদের আজীবনের জন্য বাসা ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। যদি আমার দল কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে, তখন আমি পরিবারটিকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।’ রিপন শীলের পরিবার জানায়, পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন রিপন শীল। সেলুন কর্মচারী হিসেবে চাকরি করে সংসার চালাতেন। এখন পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। বাবা রতন চন্দ্র শীলও অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। ছোট ভাই শিপন চন্দ্র শীলও (২০) ওইদিন আন্দোলনে গিয়ে আহত হন। তার শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার রয়েছে। যন্ত্রণায় মাঝে মাঝেই কাতরাচ্ছেন তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com