রবিবার, ১৩ Jul ২০২৫, ০১:৪৯ অপরাহ্ন

হবিগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মেডিকেল কলেজ

হবিগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মেডিকেল কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ৮ বছরেও হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস, জোড়াতালি দিয়ে চলছে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। নানান সমস্যা ও সংকটের অভিযোগে হবিগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেয়া হতে পারে মেডিকেল কলেজটি। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে মিটিং বসে গতকাল রবিবার।
এতে উপস্থিত থাকার জন্য ডাক পড়েছে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ জাবেদ জিল্লুল বারীর। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ জাবেদ জিল্লুল বারী জানান, দেশের ৬টি নতুন মেডিকেল কলেজের সমস্যা সমাধান ও সম্ভাবনাসহ নানান দিক নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল রবিবার ২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে মিটিং আহবান করা হয়েছে।
এতে আমাকে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। মেডিকেল কলেজ নাকি হবিগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেয়ার হচ্ছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে আমি কর্তৃপক্ষকে বলে দিয়েছি এমন কোন উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত আসলে আমরা ঢাকা সিলেট রাস্তা অবরোধ করে ফেলব। কোনভাবেই আমাদের মেডিকেল কলেজ সরিয়ে নিতে দিব না।
হবিগঞ্জে গত ২০১৬ সালে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ নামের প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর নতুন করে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ নাম দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘ ৮ বছরেও হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস। নেই ছাত্রদের পর্যাপ্ত ক্লাসরুম। হাতে-কলমে চিকিৎসা সেবা শেখার জন্য নেই অপারেশন থিয়েটার। শ্রেণিকক্ষ ও গবেষণাগার ক্লিনিক্যাল সংকট।
চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাতে-কলমে শিক্ষার ঘাটতি নিয়ে শুধু বই পড়েই চিকিৎসক হয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নিজস্ব ক্যাম্পাস ও কিছু ক্ষেত্রে আবাসন-সুবিধা না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও হতাশা তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে হঠাৎ করে যদি মেডিকেল কলেজটি সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে অধ্যায়নরত প্রায় ৫ শত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পরবে।
দেশে মোট মেডিকেল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৭টি। যার মধ্যে নিজস্ব ভবন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ছাড়া চলছে হবিগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ।
নাম না প্রকাশের শর্তে মেডিকেল কলেজে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, সাবেক এমপি আবু জাহিরের জন্যই দীর্ঘ আট বছরেও হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস। তিনি স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে প্রস্তাব করেছেন। কোন জায়গায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। মূলত তার নিজের স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহন।
মূলত সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কোনো নীতিমালা বা শর্ত নেই। সরকারে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ইচ্ছায় এসব মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে না পারলে অর্ধশিক্ষিত চিকিৎসক তৈরি হবে। এতে আর যা-ই হোক, মানুষ মানসম্মত চিকিৎসা পাবে না।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ১ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা হবিগঞ্জ মেডিকেলে কলেজে আইটি ব্যাচে মোট শিক্ষার্থী ৫০৫ জন। ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষ নিয়ে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চলে। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকসংকট চরমে। শিক্ষকদের ৮৩টি পদের মধ্যে শূন্য ৩৬টি।
মেডিকেল কলেজের দাপ্তরিক কাজ চলে দ্বিতীয় তলায়। সেখানে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের দুটি পৃথক কক্ষ। বাকি সব শিক্ষকের জন্য একটি কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় আংশিক ও তৃতীয় তলায় প্রায় তিন হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ পাঠদান করা হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ৫১ জনের ধারণক্ষমতার শ্রেণিকক্ষ থাকলেও এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ১০০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষার্থী বাড়লেও শ্রেণিকক্ষের আয়তন বাড়েনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com