রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০২:১১ পূর্বাহ্ন

নিশানের অন্যতম সহযোগী মাসুদ রানা দেশ ত্যাগের পায়তারা

নিশানের অন্যতম সহযোগী মাসুদ রানা দেশ ত্যাগের পায়তারা

মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ নিশান সংস্থার অন্যতম পরিচালক মাসুদ রানা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ায় চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতিপূর্বে নিশান সংস্থা নিয়ে গ্রাহদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রাহকদের শান্তনা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। উল্লেখ্য, মাধবপুরে গ্রাহকের দুইশত কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পায়তারা করছে নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি নামের একটি এনজিও সংস্থা। অবৈধভাবে কর্জ টাকার স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক দিয়ে শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে। প্রতি লাখে মাসে ২ হাজর থেকে আড়াই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভনে অবৈধভাবে বিপুল পরিমান অংকের আমানত সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইক্রো ক্র্যাডিট রেগুলেটিং অনুমোদন ব্যতিত শুধু মাত্র সমবায় অধিদপ্তর, সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও স্থানীয় ইউনিয়ন পারিষদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই দীর্ঘ একযুগ ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। গত ৬ মাস যাবৎ গ্রাহকদের লভ্যাংশ ও মেয়াদ পূর্তিতে আমানত ফেরত বন্ধ করে দেয়। ক্রমান্বয়ে তারা নিশান কার্যালয়গুলো গুটিয়ে নিতে শুরু করে। এরই মধ্যে নিশান এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক মইন উদ্দিন বেলাল, তার স্ত্রী আমেনা বেগম, তার ছেলে আব্দুল জলিল সায়েম, ছোট ছেলে মোঃ সালমান মিয়া, ও এনজিও’র চেয়ারম্যান মোঃ জালাল উদ্দিন ভিসা পাওয়ার জন্য পাসাপোর্ট জমা দেয়। এ খবর জানতে পেয়ে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা কার্যালয় ঘেরাও করে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পারভেজ হোসাইন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ বিন কাশেম ও থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্তিতি সামাল দেন। প্রশাসনের সামনে উপস্থিত গ্রাহকদের বলে দেওয়া হয় তাদের আমানত আগামী ৩ মাসে ফেরত দেওয়া হবে। তারা যেন বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য তাদের পাসপোর্ট গুলো জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু চতুর নিশান মালিকপক্ষ দেশ ত্যাগের উদ্দেশ্য গত ২৯ জানুয়ারি সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির মাধ্যমে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে পেরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। উল্লেখ্য যে, বিগত সরকারের আমলে সাধারণ মানুষকে প্রতি লাখে মাসে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা মুনাফার প্রলোভন দিয়ে শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় দেড়’শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
শতাধিক ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে প্রশাসনের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আইনকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া অতি মুনাফার অফার দিয়ে দেড়শ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক বা ডাকঘর আমানত জমা রাখলে প্রতি লাখে মাসে মুনাফা দেয় ভ্যাট বাদে ৭’শ কি ৮’শ টাকা। কিন্তু নিশান এনজিওর অতি মুনাফার ফাঁদে পড়ে মাধবপুর উপজেলা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন এলাকার মানুষ টাকা জমা রাখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন । এ সুযোগে নিশানের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বেলাল, তার শ্যালক জালাল উদ্দিন, মাসুদ রানা, আমেনা বেগম, সায়েম, গোবিন্দ কৈরি, গোলাপ খা গ্রামে গ্রামে, হাট বাজারে গিয়ে শত শত কোটি কোটি টাকা জমা নিয়েছে। বিশেষ করে যাদের জমি বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বিক্রি করেছে তারা বেশি লাভের আশায় সমুদয় টাকা জমা করেছে। মাধবপুর ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, নিশান আমানত সংগ্রহ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত আর্থিক কোন প্রতিষ্টান নয়। নিশান সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে টাকা জমা নিয়েছে। তাদের কারনে মাধবপুরে ব্যাংকে আমানতকারিদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
এ সুযোগে অনেক কালো টাকার মালিক সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিতে গোপনে কোটি টাকা জমা করেছে। মাধবপুর সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা সোলায়মান মজুমদার বলেন, নিশান পরিবেশ, স্বাস্থ্য সমবায় সমিতির অনুমোদন গোপনে চুনারুঘাট, শ্রীমঙ্গলে গিয়ে এনজিওর আদলে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। তাদের অবৈধ কার্যক্রমের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। পরে সমবায় সমিতির আড়ালে ব্যাংক কার্যক্রমের মত মানুষকে লোভে ফেলে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গেছে। স্থানীয় ভুক্তভোগী রমেশ কৈরি, সুবল দেব, রুবেল মিয়া, রানি বেগম নুর ইসলাম,সাইফুল,রাখাল, হৃদয় মিয়া, জায়েদ মিয়া সহ শতাধিক আমানতকারিরা জানান, নিশানের চেয়ারম্যান বেলাল ২৫ বছর আগে তেলিয়াপাড়ায় প্রতিভা নামে একটি এনজিওর কর্মচারী ছিল। তার শ্যালক জালাল উদ্দিন সেনা বাহিনীতে চাকরি করতো । পরে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হয়ে বাড়িতে চলে আসে। শ্যালক দুলাভাই মিলে পরিবেশ স্বাস্থ্য সোসাইটি নাম দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে থাকে। গ্রাহকের জমাকৃত আমানতের টাকা অবৈধ পথে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। নিশান এনজিও’র বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইলে চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়, পরে তার ব্যক্তি ম্যাচেঞ্জারের একাধিক বার নক করলেও কোন উত্তর দেননি। মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ বিন কাসিম বলেন, দেশত্যাগ না করতে পারে সেজন্য থানা ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিষয়টি স্বীকার করে আমানত সংগ্রহ করা নিশানের বৈধ কোন সরকারি অনুমোদন নেই বলে ও জানান। ক্ষতিগ্রস্তরা আদালতের দ্বারস্থ হলে সুফল পাবে বলে উল্লেখ করেন। ঘটনা খতিয়ে দেখে দেশের আইন অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com