শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ন

সিলেটে ভূমি অধিগ্রহণেই থমকে আছে চার লেন প্রকল্প

সিলেটে ভূমি অধিগ্রহণেই থমকে আছে চার লেন প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার দুই বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ফলে কোটি কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে মারাত্মক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।সরকারি দপ্তরে চিঠি চালাচালি, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মাসিক সভার সিদ্ধান্ত প্রেরণ এসব প্রক্রিয়ার মধ্যেই আটকে রয়েছে চার লেনের সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল একনেক বৈঠকে অনুমোদিত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। প্রায় ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক এবং বাকি ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা দেবে সরকার। কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এবং শেষ হওয়ার সময় ধরা হয়েছে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর। তবে এখনও ভূমি অধিগ্রহণ শুরু না হওয়ায় ঠিকাদার নিয়োগও করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তা। ফলে মাঠ পর্যায়ে কোনো কাজই এগোয়নি।এ বছরের ২৯ এপ্রিল সিলেট জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে যুক্ত চার লেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, সীমান্তবর্তী দুই উপজেলার অল্প কিছু যাত্রী পরিবহন ছাড়া এ পথে বড় ধরনের যান চলাচল নেই। তাই আপাতত চার লেন সেতু নির্মাণ জরুরি নয় এবং এতে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটতে পারে। এই মতামত জেলা প্রশাসক ৮ মে তারিখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, একনেক অনুমোদনের আগে দীর্ঘ তিন বছর ধরে এই রুটে যানবাহনের পরিমাণ ও ধরন নিয়ে জরিপ হয়েছে। শেওলা স্থলবন্দর এবং এর আশপাশে শিল্প-কারখানাসহ ভারী নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের বাস্তব চাহিদার ভিত্তিতেই চার লেন সেতুর পরিকল্পনা করা হয়েছে।শেওলা স্থলবন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কমর উদ্দিন বলেন, এই বন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। বিশেষ করে পাথর, সিমেন্ট, ফলমূল, এবং প্রাণ-সজীব গ্রুপের পণ্য আদান-প্রদান চলে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত ২০০ ভারী ট্রাক এই পথে চলাচল করে। কিন্তু জীর্ণ শেওলা সেতুর কারণে যানবাহন প্রায়ই আটকে পড়ে। নতুন চার লেন সড়ক নির্মিত হলে ব্যবসা আরও বেগবান হবে।প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক উৎপল সামন্ত জানান, শেওলা সেতুর বর্তমান অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন চার লেন সেতুটি হবে ৬০ মিটার দীর্ঘ, ২১ মিটার প্রস্থের এবং বর্ষার সময়ের সর্বোচ্চ পানির স্তর থেকে ৪০ মিটার উঁচুতে। প্রকৌশল বিশ্লেষণ ও জরিপের ভিত্তিতেই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পে ২৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, প্রায় ৪৩ কিলোমিটার চার লেন সড়ক, দুটি সার্ভিস লেন, এক হাজার ৫৭৫ জন পরামর্শক সেবা, ৩১টি কালভার্ট, তিনটি সেতু, একটি ফ্লাইওভার, ছয়টি ওভারপাস, দুটি আন্ডারপাস, চারটি ফুটওভারব্রিজ, সাতটি পায়ে চলার রাস্তা ও একটি টোল প্লাজা নির্মাণের কথা রয়েছে।সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। কয়েকটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং ভৌত অবকাঠামোর প্যাকেজ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। প্রকল্প ডিজাইন ও সেফগার্ড নথিপত্রও আপডেট করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের বর্তমান অগ্রগতি জানতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক বা ব্যবস্থাপককে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com