স্টাফ রিপোর্টার ॥ এলপি গ্যাস লিমিটেড নামে সরকারি এলপি গ্যাস সাশ্রয়ী দামে বাজারে পাওয়া যায়, তা হবিগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ মানুষ জানে না। সিলিন্ডারে ৮২৫ টাকার এই এলপি গ্যাস অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে না। সরকার প্রতিবছর প্রায় ১৪ লাখ সিলিন্ডার বাজারে সরবরাহ করলেও তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বিষয়টি এখন ‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ এমন অবস্থায় পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার বিপরীত পাশে একটি গোডাউনে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে নামি-দামি বেসরকারি গ্যাস সিলিন্ডারে ক্রস ফিলিং করে বাজারজাত করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আর এই দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বড়চর গ্রামের আব্দুস ছত্তারের ছেলে পৌর কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মতিন। যদিও তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা বলে দাবি করেন।
সূত্র জানায়, আব্দুল মতিন, তার ছোট ভাই, বিএম এলপিজি গ্যাসের এরিয়া ম্যানেজার আরিফুল হকসহ কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের যোগসাজশে সরকারি এলপিজি গ্যাস হরিলুট করা হচ্ছে।
সম্প্রতি আব্দুল মতিনের গোডাউনে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। এ সময় অভিযুক্ত মতিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপিসির গ্যাস সিলিন্ডারসহ ৬০০ সিলিন্ডার ও ক্রস ফিলিংয়ে ব্যবহৃত মালপত্র জব্দ করা হয়।
স্থানীয় করিম হোসেন জানান, গোডাউনের চারপাশে বাউন্ডারি দিয়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্ম চালিয়ে আসছেন মতিন। তার মতো অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে ৮২৫ টাকা (১২.৫ কেজি) দামের সরকারি এলপিজি সিলিন্ডার পাওয়া যায় না। অভিযুক্ত বিএম এলপিজি গ্যাসের এরিয়া ম্যানেজার আরিফুল হককে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
চুনারুঘাটের এলপিজি ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, ‘বহুদিন ধরে মতিনসহ কয়েকজন মিলে এ দুর্নীতি করে আসছে। এমনকি তারা সিলিন্ডারের ভেতরে পানি ঢুকিয়ে ওজন বাড়িয়ে দোকানে দোকানে সাপ্লাই দিচ্ছে। ফলে গ্যাস নকল বলে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন।’
হবিগঞ্জ শহরের আরেক ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া জানান, এই অসাধু চক্রের কারণে ক্রেতাদের দুর্ভোগ ও দোকানিদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
সরকারি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের হবিগঞ্জের ডিলার ফরহাদ মিয়া জানান, প্রতি মাসে ২৫-৩০টি সরকারি গ্যাস সিলিন্ডার আসত তার কাছে। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি গ্যাস সিলিন্ডার আনছেন না। ক্রস ফিলিং সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এগুলো যারা করে, তাদের কঠিন শাস্তি হোক।’ব্যবসায়ী নেতা সাকিব আহমেদ জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হয়ে এসব কালোবাজারির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো দরকার। শাহজিবাজার ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, বেশি লাভের আশায় অসাধু উপায়ে সরকারি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বেসরকারি সিলিন্ডারে ক্রস ফিলিং করে আসছিল চক্রটি। ২৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলাজুড়ে এর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply