স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুই দফায় ১০ বছর এপিএস হিসাবে কাজ করার সময় ক্ষমতার দাপটে হেন কোনো অপকর্ম নাই যা করেননি মোছাব্বের হোসেন বেলাল। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ,তদবির বানিজ্য,বালু মহাল নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের শেল্টার দেওয়া, থানায় মামলার তদবির সহ সবকিছুতেই তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। প্রথমবার ২০১৪ সালে হবিগঞ্জ-৪ ( মাধবপুর-চুনারুঘাট) থেকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর এডভোকেট মাহবুব আলীর এপিএস হিসাবে নিয়োগ পান মোছাব্বের হোসেন বেলাল। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এডভোকেট মাহবুব আলী। পুনরায় তার এপিএস হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন মোছাব্বের হোসেন বেলাল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে মাহবুব আলী পরাজিত হন। এর আগে টানা ১০ বছর মাহবুব আলীর এপিএস এর দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়ম,দূর্নীতি ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নানা অপকর্ম করে বিপুল সম্পদের মালিক হন বেলাল। এলাকার রাজনীতি ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টা করে দেদারছে টাকা কামিয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদক ও চোরাকারবারিদের শেল্টার দিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোট টাকা। কথায় কথায় নিজেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মর্যাদাসম্পন্ন বলে দাবী করতেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। বেলাল মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের রহম আলীর ছেলে।মন্ত্রীর এপিএস এর প্রভাব খাটিয়ে পিতা রহম আলীর জন্য মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাগিয়ে নিয়েছেন ২০২২ সালে। ২০১৪ সাল থেকে বেলাল নিজে ৩ টি ( বঙ্গবীর ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয়,কাজীরচক নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও সাউথ কাশিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়)
ও তার পিতা রহম আলী ২ টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের (চৌমুহনী খুর্শেদ হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও দেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) সভাপতির পদ দখল করে রাখেন। চৌমুহনী খুর্শেদ হাইস্কুল এন্ড কলেজের একটি কক্ষে রহম আলী নিজের অফিস খুলেছিলেন। বিকালে বা সন্ধ্যায় সেখানে দলের লোকজন নিয়ে মিটিং করতেন তিনি। তবে রহম আলী জানিয়েছেন তিনি নিয়ম মেনে স্কুলের মালিকানাধীন সামনের মার্কেটের একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলেন।
এলাকার লোকজন জানিয়েছেন ২ দফায় এপিএস থাকাকালীন নিজ এলাকায় ৩০/৪০ বিঘা জমি কিনেছেন। সেইসাথে ধর্মঘর এলাকায় কিনেছেন কয়েকটি বড় পুকুর। ঢাকার বনশ্রীতে করেছেন ৬ তলা বাড়ি। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে বাড়ি করেছেন বলেও এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। আওয়ামী সরকার পতনের পর বেলাল কানাডায় চলে গেছেন বলে ধারণা করছেন এলাকার লোকজন। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বেলালের সবকিছু সামলাতেন তার কথিত পিএস সুলতানপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার।এক সময় হরষপুর স্টেশন বাজারে একটি ছোট ওষুধের দোকানের মালিক সাত্তার এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক বলে জানা গেছে। সাত্তার বেলালের কালেক্টর হিসাবে কাজ করতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বেলালের নামে মাসোহারা তুলে সেই টাকা সাত্তার প্রবাসী দুই ভাগ্নের একাউন্টে জমা করতেন। পরে সেই টাকা বেলালের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি। তবে আব্দুস সাত্তার এসব অস্বীকার করে দাবি করেছেন বেলালের সাথে তার মোটেও চলাফেরা ছিল না।
৪/৫ বছর আগে এপিএস বেলাল তার কাছের লোকজনদের কাছে নিজেকে পীর দাবি করে মুরিদানী করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে কিছু লোক বিনা প্রশ্নে বেলালের কাছে মুরিদ হন। মুরিদানদের নিয়ে মাঝেমধ্যে নিজের নির্মাণাধীন খানকায় মাহফিলও করতেন বেলাল। রমজান মাসে বড় মাহফিল হতো। সেখানে ধর্মীয় বিষয়ে বয়ান ও দোয়া পরিচালনা করতেন তিনি।
হাজার খানেক লোক বেলালের কাছে মুরিদ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। মুরিদানদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন কুখ্যাত চোরাকারবারি, মাদকব্যবসায়ী ও চোর ডাকাত। নিজেদের অপরাধ আড়াল করতেই তারা বেলালের মুরিদ হয়ে বেপরোয়াভাবে চালিয়ে গেছে তাদের কর্মকান্ড।বেলালের দাপটে পুলিশ, বিজিবি কেউই এসব অপরাধীদের ঘাঁটাতে সাহস পেতো না। চৌমুহনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান সোহাগ এপিএস বেলালের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, বেলালের দাপটে আমরা মন্ত্রীর কাছে ভীড়তে পারিনি। সামান্য কাজেও বেলালকে তোয়াজ করতে হতো। এছাড়া বেলালের বাবা রহম আলীকে মাধবপুর থানা পুলিশের পিকআপ দিয়ে তার বাড়িতে আনা নেওয়া করা ছিল বাধ্যতামূলক। এমন কি এলাকার যে কোন লোকের প্রতি মন্ত্রী মাহবুব আলীর সাথে দেখা করতে হলে আগে রহম আলীর অনুমতি নিতে হত। এপিএস মোছাব্বের হোসেন বেলালের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
Leave a Reply