নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সহযোদ্ধা, সহশিল্পী ও স্বজনদের শ্রদ্ধার ফুল এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানে সিক্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, বরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে সুজেয় শ্যামের মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। এরপর ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই গীতিকার ও সুরকারের কফিন মুড়িয়ে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকায়। পুলিশের একটি চৌকশ দল সেখানে এই শিল্পীকে গার্ড অব অনার দেয়। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সুজেয় শ্যামকে শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকেশ্বরীতে এসেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তার সহশিল্পী গায়িকা শাহীন সামাদ, গায়ক তিমির নন্দী, অভিনেতা-নির্দেশক মামুনুর রশীদ, সঙ্গীতশিল্পী খোরশেদ আলম, শুভ্র দেব, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রিসহ অনেকে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে শ্রদ্ধা জানান সুজেয় শ্যামের মরদেহে। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাসাবোর সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে। সেখানেই দুপুরে সুজেয় শ্যামের মরদেহ সৎকার সম্পন্ন হয় বলে জানান তার মেয়ে লিজা। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি একমাত্র মেয়ে রূপা মঞ্জুরী শ্যাম লিজাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীত পরিচালক দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তিনি প্রায় চার মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুজেয়। কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানের সুর করেন সুজেয় শ্যাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়েছে ওই’ গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়। সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামের একটি চা বাগানের মালিক। তার শৈশব কেটেছে সিলেটের চা বাগানে আর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি এলাকায়। ১০ ভাইবোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ। গুণী এই শিল্পী সঙ্গীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক পান। তার আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।
Leave a Reply