স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ানের নাম। প্রয়াত জাতীয় নেতা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল বুধবার।বনার্ঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুবার্ষিকী নীরব নিভৃতেই চলে গেল। ২০১৭ সালের এই দিনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ভোর ৪টা ২৯ মিনিটে রাজধানী ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতি থেকে উঠে আসা বামপন্থি এই নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। আইয়ুব মোনায়েম বিরোধী উত্তাল আন্দোলনে ছিলেন সামনের সারিতে। দীর্ঘ ৫৯ বছর রাজনীতি করেছেন দাপটের সঙ্গে। বক্তৃতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করার চমৎকার ক্ষমতা ছিলো সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মধ্যে। যে কোন জটিল বা কঠিন বিষয় হাস্যরসের মাধ্যমে বলার অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টরের অধীন টেকেরঘাট সাব সেক্টরে প্রথম সাবসেক্টর কমান্ডার এবং পরে সংগঠক। ১৯৭০ সাল থেকে দিরাই শাল্ল¬া আসন থেকে সাত বার এবং হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ বানিয়াচং আসন থেকে উপনির্বাচনে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৪৫ সালের ৫ মে দিরাই উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও মা সুমতি বালা সেনগুপ্ত। তিনি দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স গ্র্যাজুয়েট ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রিও অর্জন করেন। তিনি ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। এগার দফা, ছয় দফা আন্দোলন, সত্তরে ন্যাশনাল আসেম্বলির সদস্য, সাবসেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য। সাম্যবাদী দর্শনে দীক্ষা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন তিনি।
১৯৭০ এর নির্বাচনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ন্যাপ থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে আজমিরিগিঞ্জ বানিয়াচং আসনের উপনির্বাচন বিজয়ী হওয়াসহ আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচত হন তিনি। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী করা হয় তাঁকে। ব্যক্তিগত সহকারীর দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
Leave a Reply