বিজয় ডেস্ক ॥ গাজীপুরসহ সারা দেশে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। গত শুক্রবার গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর করণীয় ঠিক করতে বৈঠক বসেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুরে গত শুক্রবার রাতে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ অভিযান গতকাল শনিবার থেকে গাজীপুরসহ সারা দেশে পরিচালিত হচ্ছে। অপারেশন ডেভিল হান্টের ব্যাপারে রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়। অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পতিত স্বৈরাচারী সরকারের যারা লুকিয়ে থেকে নানান ধরনের গুজবসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে এই সাঁড়াশি অভিযান। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে এটা করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার থেকে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে এ অভিযান শুরু করা হয়েছে। এই অভিযানে মূলত, পুলিশ, র্যাব, বিজিব, গোয়েন্দা বাহিনীসহ একাধিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অংশ নিচ্ছেন। পাশপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ অভিযানে থাকবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভার সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মধ্যেদিয়ে অপরাধী চক্ররা নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এ সকল হামলাকারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের দমন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার, পলাতক শেখ হাসিনার অনুসারী গুজব রটনাকারীদের গ্রেপ্তারসহ সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে মব তৈরি করা অতি উৎসাহীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান পরিচালিত হবে। শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের খোঁজখবর নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি এবং সেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। তাই অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করবে। তিনি বলেন, লাইসেন্সধারী বেশির ভাগ অস্ত্র পুলিশের কাছে জমা দেয়া হলেও লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশে অস্ত্র প্রবেশ করানোর মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান ফের শুরু হবে। পরাজিত কোনো শক্তি যদি জনগণের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ অভিযানের নির্দেশনা দেবে। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতিমধ্যে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর ঘোষণা দিয়েছে। এটাই আমাদের কাছে অর্ডার। কোথায় কোথায় অভিযান চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আজ রোববার বিস্তারিত জানা যাবে।
Leave a Reply