মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ মাধবপুরের নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি শতাধিক সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে প্রায় ২শ কোটির অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি ওই চক্রটি দেশ থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা চালায়। তাৎক্ষণিক মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ বিন কাশেম এর হস্তক্ষেপে দেশ ছেড়ে পালাতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিশান সংস্থা ১৯৭ কোটি টাকা নেয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও লোভের ফাঁদে ফেলে আরো অধিক টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নিশান সংস্থার ব্যক্তিগত খাতে প্রধান নির্বাহী মঈন উদ্দীন বেলাল ৮৩ কোটি টাকা, চেয়ারম্যান জালাল আহমদ ১৭ কোটি টাকা, ডেপুটি ডিরেক্টর সায়েম ৪০ কোটি টাকা, মাইক্রো ক্রেডিট ডিরেক্টর মাসুদ রানা ৭ কোটি টাকা, ডেপুটি ডিরেক্টর সায়েম ১০ কোটি টাকা। এতে দেখা যায়, ১৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকার একটি অসমাপ্ত হিসেব পাওয়া গেলেও আরো বিপুল পরিমান অর্থের কোন হদিসই নেই। মঈন উদ্দীন বেলালের স্ত্রী আমেনা বেগম কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এরও হিসাব এখন পর্যন্ত অনুদঘাটনই রয়ে গেছে। নিশান সংস্থা মাধবপুরের জগদীশপুর চৌরাস্তা, তেলিয়াপাড়ায় বিলাশ বহুল বাড়ীসহ চুনারুঘাটের আমুরোড বাজার সংলগ্ন এলাকা, বাহুবল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণ ও অফিস স্থাপন করে লোভের ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। অথচ সংস্থার নামে কোন জমি বা ভবন নির্মাণ না করে নিজেদের নামেই দলিল করে নেয় বেলালচক্র। অভিনব প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষকে লাখে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বেলাল সিন্ডিকেট। গত দু’মাস আগে থেকে নিশান সংস্থার এই প্রতারণার বিভিন্ন সংবাদ দৈনিক বিজয়ের প্রতিধ্বনি পত্রিকা একাধিকবার প্রকাশ করে আসছে। উল্লেখ্য, মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর ও তেলিয়াপাড়ায় নিশান সংস্থা প্রায় ২’শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে। সাধারণ মানুষকে লোভের ফাঁদে ফেলে একই পরিবার ও স্বজনদের একটি চক্র দীর্ঘ কয়েক বছরে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এই ফাঁদ পেতে এই টাকার হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি আঁটে। ৩’শ টাকার স্টাম্পে কর্জ হিসাবে এই টাকা আদায় করা হয়। প্রথম দিকে কিছু গ্রাহককে লভ্যাংশ দিয়ে আস্থা অর্জন করার পরই চক্রটি বেসামাল হয়ে উঠে। জগদীশপুর সহ বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয়, ভবন তৈরী করে সাজানো গোছানো আকর্ষনীয় অফিস করে। এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি হচ্ছে- সংস্থার নামে কোন দলিল বা ডকুমেন্টস তৈরী না করে ব্যক্তি নামে জমিজমা ক্রয় করে চক্রটি। চরহামুয়া গ্রামের ভদ্রবেশী প্রতারক মঈন উদ্দীন বেলাল, তার স্ত্রী আমেনা বেগম, শ্যালক জালাল আহমেদ, পুত্র সালমান ও বেলালসহ নিকটাত্মীয় আরো কয়েকজনকে নিয়ে এই ফাঁদ পাতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিশান সংস্থার এই গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ভুক্তভোগী গ্রাহকরা তেলিয়াপাড়া নিশান এর অফিস ঘেরাও করে তাদের লভ্যাংশ সহ মূলধন ফেরত চান। পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকলে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ভূক্তভোগী মানুষকে শান্ত করেন। এ সময় নিশান সংস্থা ৩ মাসের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা মুনাফাসহ পরিশোধ করার অঙ্গীকার করে। এর আগে সংস্থার কর্মকর্তারা যাতে দেশের বাইরে পালাতে না পারে সে লক্ষে মাধবুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের পাসপোর্ট জব্দ করেন। এদিকে ওই চক্রটি সুপার এক্সপ্রেসের মাধ্যমে পাসপোর্ট ডেলিভারী নিয়ে ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করে। এ সময় মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবপুর থানা পুলিশসহ জেলা প্রশাসনকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি অবগত করেন। যাতে ওই চক্রের কোন সদস্য দেশ ত্যাগ করতে না পারে। এদিকে গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে এখন হতাশাগ্রস্থ।
Leave a Reply