স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঈদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান ছয় লেনের উন্নয়নকাজ ধীরগতির হওয়ায় ইতোমধ্যে মহাসড়কে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে সিলেটে পৌঁছাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেই সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টায়। ঈদের সময়ে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ সময় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ঈদযাত্রা ২০ থেকে ২২ ঘণ্টার দীর্ঘ ভোগান্তিতে রূপ নিতে পারে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তারাবো বিশ্বরোড, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, ভৈরব চৌরাস্তা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড, মাধবপুর, ওলিপুর রেলগেইট, হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেবপাড়া বাজার, আউশকান্দি, শেরপুর ও গোয়ালাবাজার এবং শেরপুর টোলপ্লাজা এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারণ ধীরগতির নির্মাণকাজ, অব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা। সবুজ নামের এক বাসচালক বলেন, ঢাকা থেকে সিলেটে সাধারণ সময়ে যেতে ৭-৮ ঘণ্টা লাগত। এখন সেই সময় তিনগুণ বেড়ে গেছে। ঈদের সময় গাড়ির চাপ বাড়লে ২২ ঘণ্টার কমে গন্তব্যে পৌঁছা কঠিন হবে। করিম নামের অন্য আরেক বাসচালক বলেন, রাস্তায় উন্নয়ন কাজ চলছে, কিন্তু কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। দ্রুত কাজ শেষ না হলে প্রতি ঈদেই এমন ভোগান্তি পোহাতে হবে। এ দিকে, শুধু যানজটই নয়, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিলেট সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও মহাসড়কের সংস্কার কাজের ধীরগতি যানজটের অন্যতম কারণ। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে, যা যাত্রীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। যানজট ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকে সড়কপথ এড়িয়ে আকাশপথে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। তবে সেখানেও রয়েছে বাড়তি ভাড়ার চাপ। সিলেটের ট্রাভেলস ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার জলিল জানান, ঈদের সময় যাত্রীদের চাপ বাড়লেও বিমানের ফ্লাইট বাড়ানো হয় না। ফলে ভাড়া বেড়ে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাধারণ সময়ে যেখানে সিলেট-ঢাকা বিমানের ভাড়া ৩,৫০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা, এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। এটি এক ধরনের অন্যায়। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খায়রুল আলম বলেন, ঈদের সময় মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। যানজট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, যানজট নিরসনে দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার ও বিকল্প সড়ক ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি আকাশপথের ভাড়া নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। প্রতি ঈদেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা দীর্ঘ যানজট ও চরম দুর্ভোগের শিকার হন। সময় মতো ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কত দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।
Leave a Reply