নামেই শুধু ৫০ শয্যার হাসপাতাল। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল। রোগী থাকলেও নেই চিকিৎসক। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। এতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ২’জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে পুরো ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। বেকার পড়ে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে। বেহাল এই হাসপাতালটি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন মানুষ সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার একাংশের মানুষ প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসে বাহুবল হাসপাতালে। গড়ে প্রতিদিন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে ৩ থেকে ৪ শতাধিক মানুষ। কয়েক বছর ধরে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ৫০ শয্যার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৩১ জন চিকিৎসকের সম্বনয়ে চলার কথা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ২ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি। ২ জন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটিতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, এ্যানেসথেসিয়া, গাইনি এন্ড অবস, কার্ডিওলজি, অর্থো সার্জারী, চক্ষু, ইএনিটি, চর্ম ও যৌন, সার্জারি, মেডিসিন, মেডিকেল অফিসার (৩ জন), ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার প্যাথলজি, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার হোমিও দেশজ, মেডিকেল অফিসার ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (৮ জন) চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
সংকট রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির র্কমচারীর। এছাড়া সাতজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জায়গায় আছেন একজন। ফলে সময়মতো পরিষ্কার না হওয়ায় হাসপাতালে দূর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চিকিৎসক সংকট থাকায় যে কোনো রোগী এলেই জরুরি বিভাগ থেকে তাদের স্থানান্তর করা হয় হবিগঞ্জ বা সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুরুতর রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবার গুলো। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক রোগী। জনবল সংকটে এখন বন্ধ রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় মা ও নবজাতকের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র, জরুরি প্রসূতি সেবা (ইওসি), বিকল হয়ে পড়ে আছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কয়েক লাখ টাকায় কেনা ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন।
চিকিৎসা নিতে আসা তিশনা, লাকি, সিতারা, আয়েশা, মিনা, নাদিম, ইমন সহ একাধিক রোগী আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের কস্টের কথা আমরা কোথায় বলবো ? কার কাছে বলবো ? এর আগেও দুইদিন এসেছি। কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারিনি, বলেছে সকাল সকাল আসতে। আজ সকাল ৯ টায় আসছি ডাক্তার দেখাবো বলে। কিন্ত এখন বেলা ১১ টার বেশি বাজে কোন ডাক্তার এখন পর্যন্ত চেম্বারে আসেনি। কালকে শুনলাম এতোবড় এই হাসপাতালটিতে মাত্র একজন ডাক্তার আছে। এরকম একটি হাসপাতালে একজন ডাক্তার কি করবে ? একজন ডাক্তার একা কয় জায়গায় যাবে ? কোথায় চিকিৎসা দিবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. জাহেদ খান জানান, ‘চিকিৎসক ও জনবল সংকটের জন্য হাসপাতাল পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাত্র ২ জন চিকিৎসককে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। জেলার অন্য হাসপাতালগুলোর চেয়ে বাহুবলে রোগীর চাপ বেশি।লোকবলের অভাবে এই হাসপাতালে রোগীদের ভালো সেবা দেয়া যাচ্ছে না। চাহিদামতো ডাক্তার, নার্স ও ক্লিনার কোনোটাই নাই এই হাসপাতালে। আমরা জনবল পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র দিয়েছি। সীমিত জনবল দিয়েই আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্বক চেষ্টা করছি।
Leave a Reply