মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

চুনারুঘাট সহ বিভিন্ন চা-বাগানে ডন্ড উৎসব চলছে

চুনারুঘাট সহ বিভিন্ন চা-বাগানে ডন্ড উৎসব চলছে

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ প্রাচীণ ঐতিহ্য ধারণ করে যথাযথ মর্যাদার সাথে চা বাগানে পালন করছে ডন্ড উৎসব। গত কয়েকদিন ধরেই বাগানে বাগানে চলছে এ উৎসব।  উপজেলার পারকুল চা বাগানের পারকুল ডন্ড নাট্য সংস্থা এখন রয়েছে দেউন্দির ফাড়ি গেলানিয়া চা বাগানে । চা বাগানের ৮৫টি জাতিগোষ্টীর শ্রমিকদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি-কৃষ্টি,ইতিহাস,পুজা-পার্বণ ইত্যাদি। এ রকম একটি জাতি হচ্ছে “ঊড়িয়া” । তাঁরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে (চৈত্র অমাবস্যায়) ১৩ দিন যাবত একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করে চা বাগানে “ডন্ড” নামে পরিচিত। মূলত হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দেবতা মহাদেবের বা মা কালীর ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর চৈত্র মাসে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানেই দেখা যায় ডণ্ড ব্রতর আয়োজন। টানা ১৩ দিন এই ব্রত চলে। এ সময় কালীপূজা করেন ভক্তরা। ভক্তরা দিনভর উপবাস থাকেন, রাতে সেদ্ধ নিরামিষ ভূগ খান। ব্রত পালনের মধ্য দিয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ-কষ্ট দূর আর নতুন বছরটা যেন সুখ-সমৃদ্ধিতে কাটে এ কামনা করেন ভক্তরা। অনেকেই একে ‘দণ্ডপূজা’ বলেন। প্রতিদিন চা-বাগানের ভেতর দল বেঁধে ভক্তরা দণ্ডযাত্রায় বের হন। ঢাকঢোল আর গানের তালে তাঁরা হাঁটেন। এ সময় বাগান জুড়ে উৎসব শুরু হয়ে যায়। চৈত্র মাসের শেষ দিনে জমজমাট শোভাযাত্রার মাধ্যমে শেষ হয় ১৩ দিনব্যাপী দণ্ড ব্রতর। সিলেটের দলদলি চা-বাগানে দণ্ডযাত্রা নিয়ে এই ছবির গল্প। বিশেষ এক ধরনের পোশাক (লালসালু) পরিধান করে, বাদ্যযন্ত্র (ঢাক,করতাল ঘণ্টা,খঞ্জনি,ইত্যাদি), মা মণির (কালি মাতা) ছবি কাপড়ে মুড়িয়ে, হাতে জয় পতাকা নিয়ে তারা ১৩ দিনের জন্য ঘর-বাড়ি ছেড়ে এক চা-বাগান থেকে আরেক চা বাগানে যান। যাবার পথে তারা বিশেষ কিছু স্থানে অবসর নেন। যেমনঃ পাহাড়ের বড় কোন বটগাছ যেখানে কোন দেবতার পূজা করা হয়, কোন মন্দির ইত্যাদি)। ১৩ দিনের জন্য ঘর ছাড়ার পূর্বের তিন দিন তারা নিজেকে শুদ্ধ ও পবিত্র করে নেন। এ জন্য তারা উপবাস থেকে বিশেষ কিছু নিয়ম-কানুন পালন করেন। আগের দিন সন্ধার সময় তারা নদী বা গাং(ছোট নদী) এর তীরে গিয়ে মা কালীকে তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ দিয়ে আসে। তারপর যাবার দিনে মা-কালীকে তারা পূজা দেয় এবং তাদের যাত্রা সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা চান। মা-কালী তাদেরকে যে দিকে যেতে বলেন তারা সেদিকেই দল-বল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তাঁদের স্ত্রীরা স্বামীর মঙ্গলের (যাত্রাপথে যাতে কোন অসুখ-বিসুখ না হয়,দুর্ঘটনা না ঘটে) জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম-কানুন করেন,যেমন ঝাড়ুর পরিবর্তে নিজের পরিধেয় শাড়ী দিয়ে ঘর পরিস্কার করা (ঝাড় দেয়া), নিরামিষভোজী (মরিচ-পেঁয়াজ-লবণ তেল ছাড়া এক সিদ্ধ খাওয়া) হওয়া ইত্যাদি। যে চা বাগান নিজ উদ্যোগে এই দলটিকে তাদের চা বাগানে অবস্থান করার অনুরোধ জানায় তাঁরা সে চা বাগানে অবস্থান নেন। তবে কারো বাড়িতে নয়, কোন মন্দির বা বট তলায় তাঁরা অবস্থান নেন এবং সেখানেই রাত্রী যাপন করেন(একদিন বা দুইদিন)। সন্ধ্যা বেলায় আনুষ্ঠানিক পূজা শেষে রাতে তাঁরা বিশেষ এক ধরণের ধর্মীয়-সামাজিক নাটক পরিবেশন করেন, যা দেখার জন্য চা-বাগানের মানুষ দীর্ঘ এক বছর ধরে অপেক্ষা করেন। চা-বাগানের সকল ধরণের অসুখ-বিসুখ ও বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য নাটকের এক পর্যায়ে (রাত ১২ টায়) তাঁরা মা কালীকে আহব্বান করেন। ডন্ডে যেসব অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়ে থাকে  ডুলিয়া খেলা, দুনা খেলা, হাড়ি হারিয়ানি,পরবা নিত্য, শিব পরবর্তী, নন্দি বন্দি, দূর্গা কাটাম অথবা কালী কাটাম, চরয়া, শিব- পার্বতী নৃত্য, ধর্মীয় নাটক। চা-বাগানের বিলুপ্ত প্রায় এই সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তারা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com