হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানা। মিরাশী একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। মিরাশী গ্রামটি ছিল জমিদার শ্রেণীভূক্ত শ্রেণী মানুষের বাস। সেই গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন ক্ষনজন্মা কৃতিপুরুষ নিরন্ন, ভাগ্যহত মানুষের পথ প্রদর্শক হেমাঙ্গ বিশ্বাস। রাজনীতিতে তাঁর ছদ্ধনাম ছিল সঞ্জয় সেন। জমিদার স্বর্গীয় হরকুমার বিশ্বাস ও স্বর্গীয়া সরোজিনী বিশ্বাসের ঘরে ১৪ ডিসেম্বর ১৯১২ সালে জন্ম গ্রহন করেন। এই উপমহাদেশের নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্টার অগ্রসেনানী বাম রাজনীতির অন্যতম প্রবর্তক, গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস। তাঁর পিতা প্রথমে বিক্রমপুর ও পরে কলকাতায় উচ্চ শিক্ষা নিয়ে স্বগ্রাম মিরাশীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ওই গ্রামে গড়ে উঠে উচ্চ মানের একটি পাঠাগার ও একটি মিডল ইংলিশ স্কুল। ওই স্কুলে হেমাঙ্গ বিশ্বাস কৈশোরে লেখাপড়া করেন। পরে তিনি হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। শৈশবে হেমাঙ্গ বিশ্বাস তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে গান, নাটক করতেন আবার পড়াশুনাও করতেন। প্রথম দিকে যদিও লেখাপড়ায় প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে কাব্যানুরাগী হেমাঙ্গ সাহিত্য চর্র্চ্চার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ফলে প্রতিনিয়ত লেখাপড়ায় অনিয়মিত হয়ে পড়েন। হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েই তিনি তাঁর সতীর্থরা মিলে ‘সপ্তমিকা’ নামে হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর সম্পাদক ছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। রাজনীতি সচেতন সমবয়সীদের সাথে পায়চারী শুরু হয় সে সময়কার ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। লেখা পড়ার চেয়ে সাহিত্য ও রাজনীতি নিয়েই মেতে থাকতেন সারাক্ষন। ফলে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ওই বছর উর্ত্তীন্ন হতে পারেননি। এতে পারিবারিক শাসনের ষ্টীম রোলার চলে।একদিন এই কঠোর শাসনের বেড়াজাল টপকিয়ে গা ঢাকা দিলেন হেমাঙ্গ। ঘুরতে লাগলেন গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে। এরই মধ্যে সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে ( এম সি কলেজ) ভর্তি হয়ে স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। যে কারনে সেখান থেকেও বিতারিত হন। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার সময় থেকেই তিনি কমিউনিষ্ট আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। সাম্যবাদে দীক্ষা দেয়ার উপর গুরাত্বারোপ করেন। এভাবেই হেমাঙ্গ বিশ্বাস সাম্যবাদী ফ্যাসিষ্টদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার ব্রতে নিজেকে নিবেদন করেন। তখন তাঁর রাজনৈতিক তৎপরতা ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লেখা পৌষ্টার শহরের রাজপথ ও গণজমায়েতের কেন্দস্থল সমূহে দেয়ালের গাঁয়ে সেঠে দেয়া। গোপন গণজামায়েত করা, লাঞ্চিত ভাগ্যবঞ্চিত ও খেটে খাওয়া মানুষদের পাড়ায় বর্গাচাষীদের মহল্লায় ঘুরে ঘুরে তাদের নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। গণসঙ্গীতের প্রবর্তক হেমাঙ্গ বিশ্বাস একদিনে সৃষ্ট হননি বা গড়ে উঠেননি। গাঁয়ের পথে যেতে যেতে শুনতেন মেয়েদের ব্রত্যানুষ্টানের গান, বিয়ের গান, ধামালী, চাষীদের কন্ঠে বাউল মুর্শীদি গান। একতারা বাজিয়ে বাউল বৈরাগীর গান। এমনি পালা পার্বনের মাঝেই হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জীবনাচার। যে কারনে পরবর্তীকালে গণসংগীতের লোকজ ঢং টি অন্যের কাছ থেকে ধার নিতে হয়নি তাঁকে। ১৯৩২ খৃষ্টাব্দে রাজনৈতিক কারনে বন্দি হন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। জেলে বিমলা প্রসাদ চালিহার সাথে পরিচয় হয় তাঁর। বিমলা প্রসাদ চাহিলার কাছ থেকে অসমীয়া ভাষা ও গান শিখেন তিনি। ১৯৩৫ সালে কারাবন্দী থাকাকালীন সময়ে যক্ষারোগে আক্রান্ত হন তিনি। যাদবপুর থাকাকালে কিছু কাল চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন তিনি মুক্তি পান। ১৯৪৮ সালে তেলেঙ্গানা আন্দোলনের সময় তিনি আবারো গ্রেফতার হয়ে ৩ বছর কারাবন্দী থাকেন। ১৯৫৩ সালের এপ্রিল মাসে বুম্বাইতে আইপিটি এর সপ্তম সর্ব ভারতীয় সম্মেলনে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের নেতৃর্ত্বে অসমের ৪০ জন প্রতিনিধি নিয়ে অংশ গ্রহন করেছিলেন। পরে তিনি গায়ের বাড়ীতে ফিরে আসেন। হেমাঙ্গ বিশ্বাস বাড়ীতে এসেই জোতদার – জমিদারদের বিরুদ্ধে বর্গাচাষীদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। এ নিয়ে জমিদার বাবার সাথে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। ফলে একবস্ত্রে বাড়ী থেকে বিতারিত হতে হয় তাঁকে। ভাগ্যবঞ্চিত ও খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ান হেমাঙ্গ বিশ্বাস। বৈচিত্রে ভরা জীবন তার গণসংস্কৃতি আন্দোলন সৃষ্টিকারী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের বর্ণাঢ্য জীবন। তিনি সঞ্জয় সেন নামে বাম ধারার রাজনীতির ছিলেন অনন্য এক পর্বতসম নায়ক। সংগঠক গণসঙ্গীতের সংগঠন ‘মাস সিংগারার্স’ ১৯৭১। তাঁর রচনা সমূহের মধ্যে শঙ্ক চিলের গান, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান, লোক সঙ্গীত সমীক্ষা। আবার চীন দেশে এলাম। কাব্যগ্রন্থ প্রহরী এবং অসমীয় ভাষায় ‘কুলো কুড়োর চতাল’ আকৌ চীন, চাই আহিলো উল্লেখযোগ্য। তিনি ২০ নভেম্বর ১৯৮৭ ইংরেজী সালে পরলোক গমন করেন। [ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কন্যা রঙ্গিলী বিশ্বাস কলকাতার নাক তলায় হেমাঙ্গ বিশ্বাসের বাড়ীতে গড়ে তুলেছেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর্কাইভ ]
Leave a Reply